আমাদের বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হয়। বর্তমানে ওয়েবসাইট ছাড়া ইন্টারনেট প্রায় অচল বললেই চলে। কিন্তু আপনি কি একবারও ভেবে দেখেছেন যে এই ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি করা হয় বা কিভাবে চলে। একটি ওয়েবসাইট খোলার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ এবং ব্রাউজারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ইন্টারনেট এবং ব্রাউজার ছাড়াও আরেকটি জিনিস সবথেকে বেশি প্রয়োজন তা হলো হোস্টিং। আজকের পোস্টে আমরা হোস্টিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ওয়েবসাইট হোস্টিং কেন জরুরি কোথা থেকে নিবেন সুবিধা-অসুবিধা |
হোস্টিং কি?
হোস্টিং হলো একটি ভার্চুয়াল সার্ভার যেখানে একটি ওয়েবসাইটের সকল ফাইল জমা থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ফাইল দেখায়। হোস্টিং ছাড়া ওয়েবসাইট তৈরি করা একেবারেই অসম্ভব।
হোস্টিং কত প্রকার এবং কি কি?
হোস্টিং সাধারণত ৫ প্রকার। নিচে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. শেয়ার্ড হোস্টিং
বর্তমানে সবথেকে বেশি পরিচিত হলো শেয়ার্ড হোস্টিং। একটি সার্ভার থেকে যখন একাধিক ওয়েবসাইট একসাথে পরিচালনা করা হয় তখন তাকে শেয়ার্ড হোস্টিং বলে। কম দামে শেয়ার্ড হোস্টিং পাওয়া যায় বলে এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। তাছাড়া শেয়ার্ড হোস্টিং নিয়ন্ত্রণ করাও অনেক সহজ।
তবে শেয়ার্ড হোস্টিং এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। আসুন সেগুলো দেখে নিই।
সুবিধা:
১. কম দামে পাওয়া যায়।
২. ভালো কোম্পানি থেকে নিলে পারফরমেন্স ভালো পাওয়া যায়।
৩. আগে থেকেই শেয়ার্ড হোস্টিং বিক্রেতা সাধারণত সবকিছু সেটআপ করে রাখে তাই ব্যবহার করা সহজ।
অসুবিধা:
১. ওয়েবসাইট সহ হোস্টিং এর উপর সকল ক্ষমতা কোম্পানির উপর থাকবে।
২. শেয়ার্ড হোস্টিং বেশি সেফ না।
৩. একসাথে অনেক ওয়েবসাইট হোস্ট করা থাকে বলে সার্ভার ডাউন, ওয়েবসাইট অফলাইন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ধরনের সমস্যা হতে পারে।
২. VPS ( Virtual Private Server )
VPS অনেকটা শেয়ার্ড হোস্টিং এর মতো তবে এক্ষেত্রে একটি সার্ভারে শুধু একটি ওয়েবসাইট হোস্ট করা থাকে। অর্থাৎ শেয়ার্ড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে একটি ভার্চুয়াল সার্ভার অনেক ওয়েবসাইট ব্যবহার করে। কিন্তু VPS এর ক্ষেত্রে আলাদা সার্ভার দেওয়া হয় যেখানে শুধু একটি ওয়েবসাইট হোস্ট করা থাকে। VPS এর ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। চলুন সেগুলো দেখে নিই।
সুবিধা:
১. ওয়েবসাইট ডাউন অথবা অফলাইন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
২. ব্যান্ডউইথ অনুযায়ী যত ইচ্ছা তত ভিজিটর আনতে পারবেন।
৩. শেয়ার্ড হোস্টিং এর থেকে অনেক বেশি সেফ।
অসুবিধা:
১. শেয়ার্ড হোস্টিং থেকে বেশি মূল্যের হয়ে থাকে।
২. এক্ষেত্রেও হোস্টিং কোম্পানির কাছে ওয়েবসাইটের সকল ডাটা থাকবে।
৩. ম্যানেজড না হলে পরিচালনা করা কঠিন।
৩. ডেডিকেটেড সার্ভার
আপনি যদি ওয়েবসাইট এবং হোস্টিং এর সম্পুর্ন নিরাপত্তা চান তাহলে ডেডিকেটেড সার্ভার আপনার কাজে আসবে। ডেডিকেটেড সার্ভারের ক্ষেত্রে আপনার জন্য সম্পুর্ন একটি ভার্চুয়াল সার্ভার তৈরি করে দেওয়া হবে এবং সম্পূর্ন কন্ট্রোল আপনার হাতে থাকবে। ডেডিকেটেড সার্ভারের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। চলুন সেগুলো দেখে নিই।
সুবিধা:
১. সম্পুর্ন কন্ট্রোল আপনার হাতে থাকবে।
২. চাইলে পোর্ট, আইপি, সফটওয়্যার ইত্যাদি চেঞ্জ করতে পারবেন।
৩. ডেডিকেটেড সার্ভারের মাধ্যমে আপনি নিজের হোস্টিং বিজনেস শুরু করতে পারবেন।
অসুবিধা:
১. ডেডিকেটেড সার্ভারের দাম অনেক বেশি।
২. ম্যানেজড না হলে পরিচালনা করা খুবই কঠিন।
৪. রিসেলার হোস্টিং
রিসেলার হোস্টিং কিনে আপনি পুনরায় বিক্রি করতে পারবেন। অর্থাৎ যে হোস্টিং কিনে পুনরায় বিক্রি করা যায় তাকে রিসেলার হোস্টিং বলে। আমরা যেসব শেয়ার্ড হোস্টিং কিনি আসলে সেগুলো পুনরায় বিক্রি করা রিসেলার হোস্টিং। আপনি যদি ছোট খাটো হোস্টিং বিজনেস শুরু করতে চান তাহলে রিসেলার হোস্টিং কিনতে পারেন। চলুন রিসেলার হোস্টিং এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা দেখে নিই।
সুবিধ:
১. একটি হোস্টিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দিয়ে সবকিছু সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
২. প্যাকেজ তৈরি, অর্ডার ক্যানসেল, অর্ডার রিসিভ, পেমেন্ট রিসিভ ইত্যাদি সকল কিছু সহজেই করতে পারবেন।
অসুবিধা:
১. মার্কেটিং না করতে পারলে সেল আসবে না।
২. দাম তুলনামূলক বেশি।
৩. ভালো সার্ভার না হলে ক্লায়েন্টের ওয়েবসাইট ডাউন অথবা অফলাইন হতে পারে।
৫. BDIX কানেক্টেড হোস্টিং
আপনি যদি বাংলাদেশের অডিয়েন্স টার্গেট করে ওয়েবসাইট তৈরি করেন তাহলে অবশ্যই আপনার BDIX হোস্টিং কেনা উচিত। BDIX একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার। কোনো ওয়েবসাইট যদি BDIX কানেক্টেড হোস্টিং ব্যবহার করে তাহলে সেই ওয়েবসাইট যদি কেউ বাংলাদেশের ISP ( Internet service provuder ) দিয়ে ওপেন করে তাহলে প্রায় ২০০ গুণ স্পিডে ওয়েবসাইট লোড হবে। আবার যখন কেও অন্য দেশ থেকে ওয়েবসাইট ওপেন করবে তখন ওয়েবসাইট সাধারণ ভাবে ওপেন হবে।
তবে BDIX কানেক্টেড হোস্টিং এর ক্ষেত্রেও কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। চলুন সেগুলো দেখে নিই।
সুবিধা:
১. বাংলাদেশ থেকে কেও ওয়েবসাইট ভিজিট করলে অনেক তাড়াতাড়ি লোড হবে।
২. অন্য দেশ থেকে ভিজিট করলে সাধারণ ভাবে লোড হবে। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের সাধারণ স্পিড কমবে না।
৩. দাম মোটামুটি কম।
অসুবিধা:
১. ব্যান্ডউইথ এবং স্টোরেজ সাধারণত কম দেওয়া হয়।
২. BDIX কানেক্টেড হোস্টিং শেয়ার্ড হোস্টিং এর মতোই শুধু BDIX কানেক্টেড থাকে। তাই শেয়ার্ড হোস্টিং ব্যবহার করলে যে অসুবিধা গুলোর সম্মুখীন হবেন সেই অসুবিধা গুলো এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
৫ টি সেরা বাংলাদেশী হোস্টিং কোম্পানি
ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস থেকে ডোমেইন হোস্টিং কিনতে গেলে আমাদের সাধারণত পেমেন্ট মেথডের জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেকের কাছে পেপাল, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ব্যাংক একাউন্ট ইত্যাদি নেই যার কারণে আমরা ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস থেকে কোনো কিছু কিনতে পারি না। তবে বাংলাদেশে অনেক বিশ্বস্ত হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার আছে যারা সুলভ মূল্যে অনেক ভালো সার্ভিস দেয়। নিচে এমন ৫ টি বাংলাদেশী সেরা হোস্টিং কোম্পানি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. Exon host
বাংলাদেশে বিশ্বস্ততার সাথে অনেক দিন থেকে Exon host হোস্টিং সেবা দিয়ে আসছে। তাদের সার্ভিস এবং সাপোর্ট অনেক ভালো। তাছাড়া বাংলাদেশের অনেক ওয়েবসাইট Exon host এর হোস্টিং ব্যবহার করে। এখান থেকে আপনি হোস্টিং ছাড়া আরোও বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন। তাদের কোম্পানির ইউজার রিভিউ অনেক ভালো।
২. Hostever
বর্তমানে বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় হোস্টিং কোম্পানি হলো Hostever। বাংলাদেশের প্রচুর ওয়েবসাইট Hostever থেকে হোস্টিং ক্রয় করে ব্যবহার করছে। তাছাড়া মুল বিষয় হলো তাদের সাপোর্ট। তারা ২৪/৭ লাইভ চ্যাট সাপোর্ট সম্পুর্ন বিনামূল্যে দিয়ে থাকে।
৩. Putulhost
আপনি যদি কম টাকাই বেশি ব্যান্ডউইথ এবং স্টোরেজের হোস্টিং কিনতে চান তাহলে Putulhost আপনার জন্য সেরা হবে। Putulhost এর শেয়ার্ড হোস্টিং এর সকল প্যাকেজে আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ আছে এবং স্টোরেজ অনেক বেশি পরিমাণে দেয়। তাছাড়া Putulhost থেকে ২৪/৭ লাইভ চ্যাট সাপোর্ট পাবেন।
৪. BD Webs
বাংলাদেশে অনেক আগে থেকে BD Webs হোস্টিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে জনপ্রিয় এবং ট্রাস্টেড হোস্টিং কোম্পানি গুলোর মধ্যে BD Webs একটি। এখান থেকে আপনি সুলভ মূল্যে হোস্টিং কিনতে পারবেন। এছাড়া ২৪/৭ কল সাপোর্ট এবং লাইভ চ্যাট সাপোর্ট পাবেন।
৫. It nut hosting
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কয়েকটি সেরা হোস্টিং কোম্পানি গুলোর মধ্যে It nut hosting একটি। বর্তমানে তাদের অনেক কাস্টমার আছে এবং ২৪/৭ ফ্রি লাইভ সাপোর্ট দিয়ে থাকে। এছাড়া এই কোম্পানিটি ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বস্ততার সাথে সেবা দিয়ে আসছে।
ওয়েবসাইটের জন্য কোন ধরনের হোস্টিং কিনবেন?
ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের হোস্টিং প্যাকেজ আছে। তবে আপনার ওয়েবসাইটে কোন ধরনের হোস্টিং ব্যবহার করবেন তা আপনার ওয়েবসাইট কোন শ্রেনীর এবং কেমন ভিজিটর আসে তার উপর নির্ভর করবে। আপনি যদি নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করেন তাহলে কোনো বিশ্বস্ত কোম্পানি থেকে শেয়ার্ড হোস্টিং কিনতে পারেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশী অডিয়েন্স টার্গেট করে ওয়েবসাইট তৈরি করলে BDIX কানেক্টেড শেয়ার্ড হোস্টিং আপনার জন্য সেরা হবে।
আপনার ওয়েবসাইটে যদি প্রচুর ভিজিটর থাকে তাহলে VPS সার্ভার ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তাহলে টাকা বেশি লাগলেও ডেডিকেটেড সার্ভার আপনার কেনা উচিত।
কারন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিকিউরিটি অনেক গুরুত্বপুর্ন। এভাবে আপনার ওয়েবসাইট এবং বাজেটের উপর ভিত্তি করে আপনি কিনতে পারেন।
আজ এই পর্যন্ত। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।