বর্তমানে এসইও অনেক জনপ্রিয় ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি প্রকারভেদ। এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন করে একটি ওয়েব পেজ সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করানো যায়।
আমরা কোনো কিছু সহজে খুজে বের করার জন্য সাধারণত সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করি। আমাদের মত লক্ষ লক্ষ মানুষ সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে। তাই এসব সার্চ ইঞ্জিনে সাইট র্যাংক করাতে পারলে খুব সহজেই অনেক ভিজিটর পাওয়া যায়। আজকে আমরা জানব এসইও কি? এসইও এর প্রকারভেদ এবং অন পেজ এসইও এবং অফ পেজ এসইও সম্পর্কে।
|
বেস্ট এসইও(SEO) টেকনিক ১০০% র্যাংকিং |
এসইও(SEO)
যে উপায় সমূহ অবলম্বন করে কোন ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করানো যায় তাকে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা সংক্ষেপে এসইও বলে। বর্তমানে ইন্টারনেটে অসংখ্য সক্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে। সেসব ওয়েবসাইট গুলোর প্রায় সবই কোনো না কোনো সার্চ ইঞ্জিন ক্রল করে রেখেছে। এসব ওয়েবসাইটের ফলে সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে প্রচুর প্রতিযোগীতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই আপনি যদি আপনার সাইট সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে র্যাংক করাতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে এসইও শিখতে হবে।
এসইও মুলত দুই প্রকার:
১) অন পেজ এসইও এবং
২) অফ পেজ এসইও
১/ অন পেজ এসইও
অন পেজ এসইও ( অন সাইট এসইও নামেও পরিচিত ) হলো ওয়েবসাইটের মধ্যকার এসইও। ওয়েবসাইটের জন্য অন পেজ এসইও সবথেকে বেশি গুরুত্বপুর্ন। অন পেজ এসইও এর মধ্যে টাইটেল, মেটা ডিস্ক্রিপশন, কিওয়ার্ড পজিশন এবং ডেনসিটি, ইমেজ এসইও, স্কিমা মার্কআপ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
কিওয়ার্ড (Keyword)
বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিনে প্রচুর কন্টেন্ট ইনডেক্স হয়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের কিওয়ার্ডে প্রচুর কম্পিটিশন বৃদ্ধি পেয়েছে। মুলত এ কারণেই কিওয়ার্ড রিসার্চ অনেক গুরুত্বপুর্ন। বর্তমানে হাই ভলিউম এবং লো কম্পিটিশনের কিওয়ার্ড খুজে পাওয়া অনেক কষ্টকর। এর জন্য প্রচুর কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হয়। কিওয়ার্ড বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
কিওয়ার্ড মুলত তিন ধরনের:
১) হেড টার্ম কিওয়ার্ড
২) লং টার্ম কিওয়ার্ড
৩) LSI কিওয়ার্ড
সাধারণত একটি বা দুটি শব্দের কিওয়ার্ড গুলোকে হেড টার্ম কিওয়ার্ড বলে।
যেমন: "ক্রিকেট গেম" একটি হেড টার্ম কিওয়ার্ড। তাছাড়া প্রতিটা একক শব্দের কিওয়ার্ড গুলো এই কিওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত।
দুই বা ততোধিক শব্দ দ্বারা গঠিত এবং বিস্তারিত বর্ননাকারী কিওয়ার্ড গুলো হলো লং টার্ম কিওয়ার্ড। যেমন "কিভাবে ক্রিকেট খেলতে হয়" এটি একটি লং টার্ম কিওয়ার্ড। এই ধরনের কিওয়ার্ডে সাধারণত কম্পিটিশন কম থাকে।
প্রধান কিওয়ার্ডের সাথে গভীর সম্পর্কযুক্ত বা প্রধান কিওয়ার্ডের সাথে সমার্থক এমন কিওয়ার্ড গুলোকে LSI কিওয়ার্ড বলে। যেমন ব্যাট, বল, হেলমেট ইত্যাদি "ক্রিকেট" কিওয়ার্ডের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এসইও এর ক্ষেত্রে এটি ভালো ভুমিকা পালন করে।
আবার অন্য দিকে থেকে কিওয়ার্ড দুই ধরনের যথা: এভারগ্রীন এবং ট্রেন্ডিং কিওয়ার্ড।
১/ এভারগ্রীন কিওয়ার্ড
২/ ট্রেন্ডিং কিওয়ার্ড
যেসব কিওয়ার্ডের চাহিদা সারাজীবন থাকে সেসব কিওয়ার্ড গুলোকে এভারগ্রীন কিওয়ার্ড বলে। যেমন " শরীর সুস্থ রাখার উপায় " এই কিওয়ার্ডটির চাহিদা এবং সার্চ ভলিউম সবসময়ই প্রায় একই থাকবে।
একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যেসব কিওয়ার্ডের সার্চ ভলিউম বেশি থাকে সেই কিওয়ার্ড গুলোকে ট্রেন্ডিং কিওয়ার্ড বলে। যেমন "রোহিঙ্গা" কিওয়ার্ড নিয়ে একসময় প্রচুর সার্চ হতো। কিন্তু বর্তমানে সার্চ হয়না বললেই চলে। নিউজ সাইটের ক্ষেত্রে ট্রেন্ডিং কিওয়ার্ড অনেক গুরুত্বপুর্ন।
ওয়েবসাইট র্যাংক করানোর উপায়
অয়েবসাইট র্যাংক করাতে হলে কিছু বিষয় আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। যেমনঃ
১. কিওয়ার্ড ডেনসিটি
২. টাইটেল
৩. মেটা ডিস্ক্রিপশন
৪. ইমেজ অপ্টিমাইজেশন
৫. ইন্টার্নাল এবং এক্সটার্নাল লিংকিং
৬. কন্টেন্ট অপ্টিমাইজেশন
৭. ওয়েবসাইটের স্পিড অপ্টিমাইজেশন
১. কিওয়ার্ড ডেনসিটি
কিওয়ার্ড ডেনসিটি হলো একটি কন্টেন্টের মধ্যে প্রধান কিওয়ার্ডটি কতবার উল্লেখ করা হয়েছে তার একটি পরিমাপ। ডেনসিটি এর বাংলা পরিভাষা হলো ঘনত্ব। অর্থাৎ কন্টেন্টের মধ্যে কিওয়ার্ডের ঘনত্ব হলো কিওয়ার্ড ডেনসিটি। যদিও বর্তমানে এটি তেমন গুরুত্বপুর্ন কোনো বিষয় না তবে কন্টেন্টের মান রক্ষার্থে এটি অনেক গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে। যেমন আপনি যদি একটি কন্টেন্টে প্রধান কিওয়ার্ড প্রচুর উল্লেখ করেন তাহলে সার্চ ইঞ্জিন গুলো উক্ত কন্টেন্টকে মানসম্মত হিসেবে ধরবে না। কারন আপনি যদি একটি কিওয়ার্ড অনেকবার উল্লেখ করেন সেক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন ক্লিক বেইট অথবা কম ইউজার ফ্রেন্ডলি হিসেবে ধরে নেবে। আপনি প্রতি ১০০ শব্দের মধ্যে সাধারণত ১-২ বার প্রধান কিওয়ার্ড উল্লেখ করতে পারেন।
ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনার ক্ষেত্রে টাইটেল অনেক গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে। একটি মানসম্মত টাইটেল বাছাই করা অনেক গুরুত্বপুর্ন। কারন কিছু মানুষ টাইটেল পড়ার পরে ওয়েবসাইটে ক্লিক করে। টাইটেল তৈরি করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
১. ৫০-৬০ বর্ণের মধ্যে টাইটেল তৈরি করা সবথেকে ভালো।
২. মুল কিওয়ার্ডটি টাইটেলের প্রথমে রাখার চেষ্টা করবেন এবং একাধিক বার উল্লেখ করবেন না।
৩. টাইটেলে সংখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। যেমন: "সেরা ৫ টি ভিডিও ইডিটিং অ্যাপ"।
৫. টাইটেলের ভাষা মার্জিত এবং শুদ্ধ রাখার চেষ্টা করবেন।
উপরোক্ত পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করলে খুব সহজেই এসইও ফ্রেন্ডলি টাইটেল লিখতে পারবেন।
৩. মেটা ডিস্ক্রিপশন
মেটা ডিস্ক্রিপশন সাইটের জন্য অনেক গুরুত্বপুর্ন। আপনি যদি প্রতিটি পোস্টে আলাদা করে মেটা ডিস্ক্রিপশন লিখেন তাহলে আপনার পোস্ট সার্চ ইঞ্জিনের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। মেটা ডিস্ক্রিপশনের মধ্যে অবশ্যই মুল কিওয়ার্ডটি রাখার চেষ্টা করবেন এবং সেই কিওয়ার্ডটি যেনো সবার প্রথমে অথবা প্রথম লাইনে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। অনেক ভিজিটর আছে যারা কোনো ওয়েবসাইট খোলার পূর্বে মেটা ডিস্ক্রিপশন পড়ে নেই। তাই এমন একটি মেটা ডিস্ক্রিপশন লিখবেন যেনো ভিজিটর মেটা ডিস্ক্রিপশন পড়ে পোস্টে ক্লিক করে।
৪. ইমেজ অপ্টিমাইজেশন
আমরা পোস্ট করার সময় অনেক ধরনের ইমেজ ব্যবহার করি। এই ইমেজ গুলোতে আমরা চাইলেই কিওয়ার্ড বসাতে পারি। alt ট্যাগের সাহায্যে আপনি ইমেজে কিওয়ার্ড বসাতে পারবেন এবং সার্চ ইঞ্জিন আপনার ইমেজ সম্পর্কে ধারণা পাবে। যদিও ইমেজ অপ্টিমাইজেশন খুব একটা গুরুত্বপুর্ন না তবে এটি সার্চ ইঞ্জিনের কাছে আপনার পোস্টের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
৫. ইন্টার্নাল এবং এক্সটার্নাল লিংকিং
আপনার সাইটের কোনো পোস্টের লিংক অন্য পোস্টের সাথে লিংক করলে তাকে ইন্টার্নাল লিংকিং বলে। অপরদিকে অন্য সাইটের লিংক আপনার পোস্টের সাথে লিংক করালে তাকে এক্সটার্নাল লিংকিং বলা হয়। বর্তমানে এটি সার্চ কনসোলের কাছে অনেক গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে। ধরুন আপনি "ডিজিটাল মার্কেটিং" কিওয়ার্ড নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখছেন। এখন আপনার সাইটে ইতোমধ্যে ফেসবুক মার্কেটিং নিয়ে একটি পোস্ট আছে। তাহলে আপনি ফেসবুক মার্কেটিং নিয়ে করা পোস্টের লিংক ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে করা পোস্টের সাথে লিংকিং করে দিতে পারেন। এমন সম্পর্কযুক্ত পোস্ট গুলো একে অপরের সাথে লিংকিং করলে কন্টেন্টের মান অনেক বৃদ্ধি পায়।
৬. কন্টেন্ট অপ্টিমাইজেশন
আমরা উপরে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম সেগুলো সবই কন্টেন্ট অপ্টিমাইজেশনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তবে এগুলো ছাড়া আরোও কিছু বিষয় আছে যেগুলো আপনার জানা দরকার। একটি মানসম্মত কন্টেন্ট লেখার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করতে পারেন।
১. পোস্টে কোনো বড় প্যারা রাখবেন না। দুই তিন লাইন পরপর স্পেস দেবেন। এর ফলে পাঠক আপনার কন্টেন্ট পড়ার সময় সাচ্ছন্দ বোধ করবে।
২. বিভিন্ন ধরনের ইমেজ ব্যবহার করতে পারেন।
৩. হেডিং, টেবিল, লিস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করবেন।
৪. টেবিল অফ কন্টেন্ট বা সূচিপত্র ব্যবহার করতে পারেন।
৭. ওয়েবসাইটের স্পিড অপ্টিমাইজেশন
স্পিড অপ্টিমাইজেশন অনেক গুরুত্বপুর্ন একটি অন পেজ এসইও ফ্যাক্টর। গুগলের তথ্য মতে যেসব ওয়েবসাইট লোড হতে ৩ সেকেন্ডের বেশি সময় নেয় সেসব ওয়েবসাইট গুলো অনেক ভিজিটর হারায়।নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করে আপনি ওয়েবসাইটের স্পিড বাড়াতে পারবেন।
১. ভালো মানের হোস্টিং ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের স্পিড অনেক বাড়ানো যায়।
২. ফাস্ট এবং লাইট থিম ব্যবহার করলে সাইটের স্পিড অনেক বেড়ে যায়।
৩. যদি আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ইউজার হোন তাহলে স্পিড অপ্টিমাইজেশন প্লাগইন ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের স্পিড অনেক বাড়াতে পারবেন।
৪. ওয়েবসাইটে কিছু অব্যবহৃত কোড মুছে ফেলার মাধ্যমে ওয়েবসাইটের স্পিড বাড়াতে পারেন।
৫. অনেক সময় বড় সাইজের ইমেজ ওয়েবসাইটের স্পিড অনেক কমিয়ে দেয়। তাই ইমেজ গুলোর সাইজ কমাতে পারেন।
২/ অফ পেজ এসইও
ওয়েবসাইটের বাইরে যেসব এসইও টেকনিক ব্যবহার করা হয় তাকে অফ পেজ এসইও বলে। সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান আরোও পাকাপোক্ত করার জন্য অফ পেজ এসইও করা যায়। ব্যাংকলিংক, সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ারিং, পেইড মার্কেটিং ইত্যাদি অফ পেজ এসইও এর অন্তর্ভুক্ত। অন পেজ এসইও এর পাশাপাশি অফ পেজ এসইও করলে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে ওয়েবসাইটে প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়।
অন পেজ এসইও ওয়েবসাইটের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ভাবে অন পেজ এসইও করলে সার্চ ইঞ্জিন আপনার সাইটকে সার্চ রেজাল্টের প্রথম পেজে উঠাতে সাহায্য করে। কিন্তু অফ পেজ এসইও করলে সাইট সার্চ রেজাল্টের প্রথম দিকে চলে আসতে পারে। অতএব অফ পেজ এসইও সার্চ ইঞ্জিনের কাছে আপনার সাইটের প্রাধান্য বাড়িয়ে দেয়। একারণেই মুলত আমাদের অফ পেজ এসইও করা উচিত। এছাড়া সার্চ ইঞ্জিন বাদে অন্য কোন মাধ্যম থেকে ভিজিটর আনতে চাইলে অফ পেজ এসইও করা উচিত।
সুন্দর
উত্তরমুছুনআমি এসইও করে পোস্ট করার চেষ্টা করি। ইম্প্রেশন বাড়ছে। ব্যাকলিংকটা করা হচ্ছে না। পেইড ব্যাকলিংক এর সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তরমুছুন