মার্ক জাকারবার্গ-এর মতে মেটাভার্স হচ্ছে ইন্টারনেট-এর পরবর্তী আবিষ্কার। কিন্তু মেটাভার্স বিষয়টি আসলে কী? কীভাবে কাজ করবে? কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? এর ভালোদিক মন্দদিক কী হতে পারে? আদৌ এর কোন নির্ভরযোগ্যতা আছে কি না এবং মেটাভার্সের নিয়ন্ত্রণে কেমন হবে বিশ্ব এসবের বিস্তারিত নিয়েই আমাদের আজকের প্রবন্ধ। আশাকরি ধৈর্য সহকারে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন।
প্রতিষ্ঠার আঠার বছর পর বিশ্বসেরা ধনী মার্ক-জাকারবার্গ যখন ফেইসবুকের নাম পরিবর্তন করে মেটা রাখলেন তখনই সারা বিশ্বে মেটা কেন্দ্রিক মাতামাতি শুরু হয়। কিন্তু এই মেটাভার্স-এর প্রথম ধারণা দেন আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন রাইটার নীল স্টিফেন্সন। মিস্টার স্টিফেনসন তার বিখ্যাত উপন্যাস "স্নো ক্রাশ" ("Snow Ceash") এ ১৯৯২ সালে প্রথম মেটাভার্সের কল্পকাহীনি তুলে ধরেন। উপন্যাসে লেখক ভার্চুয়াল বাস্তবতায় প্রাণবন্ত 3D অবতারের মিথস্ক্রিয়া কল্পনা করেছেন। যা আজকে বাস্তবায়নের দাবীদার।
১/ মেটাভার্সের উৎপত্তি
Metavarse শব্দটি Meta এবং Universe এর Verse এর সমন্বয়ে গঠিত। মেটা’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে বাইরে বা অতিক্রম করে যা এবং ‘ভার্স’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘বিশ্ব’। তাহলে মেটাভার্সের অর্থ দাঁড়ায় ‘বিশ্বের বাইরের বিশ্ব’। মেটাভার্স দুনিয়ায় ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সসহ রয়েছে অত্যাধুনিক সব রকম প্রযুক্তির সমন্বয়। তাই বলা যায় মেটাভার্স কোনো একক ধরনের প্রযুক্তি নয়। আমরা কীভাবে কিছু আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করি এবং এর সাথে যুক্ত হই তার একটি বিস্তৃত উপায়। একটু উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে আরও সহজ হবে। নতুন অবস্থায় মেটাভার্স হল একটি মহাবিশ্ব যা শুধুমাত্র ইন্টারনেটে বিদ্যমান এবং আপনি VR (Virtual Reality) হেডসেটগুলির সাথে ঐ বিশ্বে অ্যাক্সেস করতে পারেন৷ আপনি এটাকে সাইবারস্পেস বা ভার্চুয়াল বিশ্ব বা ডিজিটাল বিশ্ব বলতে পারেন। ঠিক যেমন আমাদের মহাবিশ্বে আমরা শারীরিকভাবে বিদ্যমান, মেটাভার্সে, আমরা মূলত ভার্চুয়ালি বিদ্যমান থাকতে পারি।
অর্থাৎ মেটাভার্সকে একটি ভার্চুয়াল পরিবেশ হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে যেখানে আপনি কোনকিছু স্ক্রিনে দেখার পরিবর্তে ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন। আসলে এটি সীমাহীন এবং পরস্পর সংযুক্ত ভার্চুয়াল সম্প্রদায়ের একটি দুনিয়া যেখানে মানুষজন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট, অগমেন্টেড রিয়েলিটি চশমা, স্মার্টফোন অ্যাপ বা অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহার করে একে অপরের সাথে দেখা করতে, কাজ করতে এবং খেলতে পারবেন।
২/ মেটা কেন এত আলোচিত
শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফেসবুকের নেতৃত্বে নতুন করে মেটায় ফোকাস করা হয়। মেটার সিইও জাকারবার্গের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, মেটাভার্সের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্যগুলি সাধারণ হয়ে উঠতে পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লাগবে। যদিও মেটাভার্সের অনেক বৈশিষ্ট্য এখন বিদ্যমান, ভিআর হেডসেট থেকে সর্বদা অনলাইন ভার্চুয়াল উপস্থিতি পর্যন্ত, এগুলি এখনও সর্বজনীন নয়। ব্যয়বহুল হওয়ায় ধারণার পিছনের প্রযুক্তিগুলি গড় গ্রাহকদের কাছে বহুলাংশে অ্যাক্সেসযোগ্য নয়। এটি ইন্টারনেটের প্রথম দিনগুলির মতো। ইন্টারনেটের মতোই এটি বিবর্তিত হতে থাকবে। মেটাভার্সের বৃদ্ধি এবং বিকাশের সাথে সাথে এটি আপনাকে একটি হাইপার-রিয়েল বিকল্প বাস্তবতা প্রদান করবে। জাকারবার্গ মেটার পুনঃব্র্যান্ডিংয়ের সাথে যা কল্পনা করেছেন তার একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল সমস্ত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্ল্যাটফর্মের কেন্দ্রীকরণ।
অর্থাৎ এর আলোচনার কেন্দ্র দখল করে আছে ত্রিমাত্রিক বিশ্ব যেখানে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির সাথে এমন সব প্রযুক্তির সমন্বয় হতে যাচ্ছে যা বর্তমান সময়ের জন্য কল্পনাতীত।
৩/ মেটার মেকানিজম
মেটার মেকানিজম বুঝতে হলে আমাদের আরও একবার ফিরে যেতে হবে মিস্টার স্টিফেন্সন এর স্নো ক্রাস উপন্যাসে। সেখানে লেখক এমন এক বিশ্বের ধারণা দিয়েছে যে বিশ্ব হবে সম্পূর্ণ ত্রিডি(3D) ভিত্তিক, মানুষ হবে পুরোপুরি programmable avatars অর্থাৎ মানুষ হবে প্রোগ্রামেবল। সহজ করে বললে মানুষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিবে প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার। যেখানে মানুষ চাইলেই একে অপরের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারবে মুহুর্তের মধ্যে। আমেরিকান ঐ উপন্যাসিক আরও বলেছেন ত্রিমাত্রিক ঐ বিশ্বে একটা জমিদারি থাকবে। যার মালিকানা থাকবে গ্লোবাল মাল্টিমিডিয়া প্রোটকল গ্রুপের কাছে। তারা এর নিয়ন্ত্রণ করবে রিয়েল এসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারি-এর সাহায্যে। সেখানে একটি নতুন সাবকালচার এর আবির্ভাব হবে। নেটিজেনরা ঐ বিশ্বে যেকোনো রুপেই আবির্ভূত হতে পারবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, বিনোদন, বিনিয়োগ, লেনদেন জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র থাকবে না যেখানে মেটাভার্সের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
৪/ মেটা কেন গুরুত্বপূর্ণ
১৯৬৯ সালে আমেরিকার সৈন্যদের আফ্রানেট আবিস্কারের আগে মানুষ কখনও ভাবতে পেরেছিল, যে পৃথিবী একদিন ইন্টারনেটের দখলে চলে যাবে? অথচ আজকে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে ইন্টারনেট ছাড়া এক মুহুর্তও চিন্তা করতে পারি না। তৎকালীন বিশ্বকে আমুলে পরিবর্তন করে দিয়েছে এই অদৃশ্য ইন্টারনেট। ঠিক তেমনি মেটাভার্স হচ্ছে ইন্টারনেট এর পরবর্তী আবিষ্কার। এর ফলে যা হতে যাচ্ছে তা হয়তো আপনার ব্রেইন কখনও চিন্তাও করছে না। কিছু আজব ব্যাপার হলো মেটাভার্স সফলভাবে তার যাত্রা শুরু করে দিয়েছে।
৫/ মেটার উপর মানুষের নির্ভরতা
যখন হজ্ব করতে ছয় মাস লেগে যেত, তখন হাজ্বিরা কি কখনও ভেবেছিল যে একদিন বিমান আবিষ্কার হবে মাত্র ৩ ঘন্টার ব্যবধানে বাংলাদেশ থেকে মক্কায় যাওয়া যাবে? কিন্তু বিমান সহজলভ্য হওয়ার পর আমরা হেটে কিংবা জাহাজে হজ্বে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারি না। মার্টিন কুপার ১৯৭৩ সালে মোবাইল আবিস্কারের আগে কেউ কি ভেবেছিল যে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে ওয়্যারলেস মাধ্যমেই মানুষ কথা বলতে পারবে? অথচ আজকের ইন্টারনেট আবিষ্কারের ফলে আমরা কত কি নাই করছি!! এমনভাবেই করছি, মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ছাড়া এক মুহুর্ত কল্পনা করতেই পারছি না। ঠিক তেমনি মেটার জন্ম লগ্নে আমরা মেটা নিয়ে বেখেয়ালি থাকলেও একদিন নিউরনে নিউরনে মিশে যাবে মেটাভার্সের ছোয়া। সেদিন আর কোন কিছুই অবাস্তব মনে হবে না।
৬/ কেমন হবে মেটার দুনিয়া
মেটার দুনিয়া হবে এক অদ্ভুত দুনিয়া। যারা ইতোমধ্যে 3D গেইম খেলেছেন কিংবা 3D সিনেমা দেখেছেন তারা কিছুটা হলেও ধারণা করতে পারেন। আমি আরেকটু ক্লেয়ার করে দিচ্ছি।
একটা সময় আপনি চিঠি লিখতেন, তারপর মোবাইল ফোনে সরাসরি কথা বলতেন, আরও আপডেট হলো আপনি ভিডিও চ্যাটে সব দেখছেন। কিন্তু তারপর কী হবে ভেবেছেন? আপনি তখন স্পর্শ করতে পারবেন। ফিল করতে পারবেন। আর সেটি বাস্তবায়ন করবে মেটাভার্স। তখনই গ্লোবাল ভিলেজ স্বরুপে প্রস্ফুটিত হবে।
ব্যাপারটা এমন যে, বাসা থেকে বের হবার আগে একবার শহরের রাস্তা-ঘাট দেখে নিতে পারবেন। কারণ তখন হাজার মিটার উচু থেকে অনায়েসেই লাইভ বিচরণ করা যাবে।
অফিস থেকে বেরোনোর পর আচমকা জানতে পারলেন প্রিয়জন গুরুতর অসুস্থ। হাজার মেইল দূর থেকেও অসুস্থ আপনজনের শরীরে স্পর্শ করতে পারবেন। তার শরীরের তাপমাত্রা অনুভব করতে পারবেন।
তপ্ত গরমে হাসফাস অবস্থা। খুবই নাজেহাল হয়ে আছেন। এমন সময় চাইলেই সরাসরি ইউরোপের আমেরিকার স্নোফলের সাধ নিতে পারবেন। বাংলাদেশে বসেই শরীরে ঝিরিঝিরি হিম শীতল বাতাস এবং স্নোফল পরার অনুভুতি পাবেন।
আপনি চাইলেই ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত হতে পারবেন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে। অংশ নিতে পারবেন মিছিল মিটিং সামাবেশও। বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলার এর সাথে একই মাঠে ফুটবল খেলতে পারবেন। শিক্ষা ভ্রমণ কিংবা বিনোদন ছোট থেকে বড় কোনকিছুই রেহাই পাবেনা মেটাভার্সের খপ্পর থেকে। হাজারো কাল্পনিক রুপকথার বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে মেটাভার্স।
৭/ মেটার আর্থ-সামাজিক গুরুত্ব
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের মতে, আগামীতে ইন্টারনেট বা মেটাভার্সই ডিজিটাল অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে। তাহলে কীভাবে এ মেটাভার্সের মাধ্যমে পরিবর্তন হবে? এপর্যন্ত আমরা কী জানতে পারলাম চলুন জেনে নেওয়া যাক।
বিশ্ববিখ্যাত বিনিয়োগকারী ব্যাংক এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলো গোল্ডম্যান স্যাক্স, মর্গান স্ট্যানলি এবং সিটি গ্রুপের মতে, আগামী ৩-১০ বছরের মধ্যে মেটাভার্স ৮ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে শুরু করে ১২ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অর্থনৈতিক পরামর্শকারী সংস্থা ‘অ্যানালাইসিস গ্রুপের’ এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মেটাভার্সের বাস্তবায়নের ফলে আগামী ২০৩১ পৃথিবীর মোট জাতীয় আয় বা জিডিপি ২.৮% বৃদ্ধি পাবে সালের মধ্যে। আর দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপির ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বা ১ দশমিক শূন্য ৮ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশ যে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। তাতে ব্যাপক ভুমিকা রাখবে মেটাভার্স।
গার্টনার এর তথ্যমতে 2026 সালের মধ্যে 25 শতাংশ মানুষ পেশাদার, ব্যক্তিগত এবং বিনোদনের উদ্দেশ্যে প্রতি সপ্তাহে অন্তত সাত ঘন্টা মেটাভার্সে ব্যয় করবে।
জেপি মর্গান ইতোমধ্যে Decentraland এর ভার্চুয়াল মল Metajuku তে স্পেস কিনে নিয়েছেন।
স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টাড ব্যাংক Decentraland এ জমি কেনার কথা প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে HSBC এবং SCB অলরেডি Sandbox এ তাদের ভার্চ্যুয়াল লঞ্জ উন্মুক্ত করেছেন। পাশাপাশি ভারতের দ্য ইউনিয়ন ব্যাংক Metaverse এর ভার্চ্যুয়াল লঞ্জ ঘোষণা করেছে।
এথেকে একথা স্পষ্ট যে, মেটাভার্সের আধিপত্য নিয়ে ইতোমধ্যেই কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেছে।
৮/ সমসাময়িক তথ্য-প্রযুক্তি
মেটা এখনও প্রাথমিক লেভেলে থাকায় VR Headset এর মত কিছু জিনিসের বাইরে তেমন সহজলভ্য হয় নি। তবে এ নিয়ে বিশ্ব মোড়লদের মধ্যে নিয়মিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের হিড়িক পড়ে যাচ্ছে। কেউ বানাচ্ছেন গেইম কেউবা নির্মাণ করছেন সিনেমা। চলুন এব্যাপারে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা যাক-
Fortnite, Minecraft বা Roblox এর মতো অনলাইন গেমিং জগতে ইতিমধ্যেই মেটাভার্সের ধ্যান ধারণা প্রকাশিত হয়েছে। এই গেইমগুলোতে 3D ভার্সনে মানুষের যাবতীয় কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও
Tron (1982), Matrix (1999), Ready Player One (2011/2018), Avatar, Axie Infinity, Decentraland, Sandbox, Illuvium, Hain of Alliance, My Neighbor Alice, Krystopia, Alien Worlds, Farmers World, Prospectors এর মত গেইমগুলোতে মেটার আবির্ভাব লক্ষ্য করা যায়।
অপরদিকে স্টিভেন স্পিলবার্গের 2017 সালের চলচ্চিত্র "রেডি প্লেয়ার ওয়ান" হচ্ছে মেটাভার্সের সবচেয়ে কাছের উদাহরণ। আবার দ্য মরুদ্যান(The Oasis) কে তো সিনেমার মেটাভার্সই বলা হয়; যেখানে বাস্তবতা থেকে পালানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
৯/ মেটাভার্সের বাস্তবায়নের বিখ্যাত কোম্পানি
গুগলের সিইও Sundar Pichai ব্লুম্বার্গের এক ইন্টারভিউ এ বলেন augmented reality দিয়ে মেটা কম্পিউটিং কে ব্যাপকহারে গ্রাস করবে। আর এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিবে- Microsoft, Epic Games, The Sandbox, Snapchat, Unity Software, NVIDIA, Amazon এর মতো মোড়লরা।
১০/ মেটাভার্স সম্পর্কে বিতর্ক এবং উদ্বেগ
মেটাভার্স নিয়ে যে দুটি প্রধান উদ্বেগের কথা উঠে এসেছে, তারমধ্যে একটি হলো সিকুউরিটি বা নিরাপত্তা এবং আরেকটি হলো প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা।
নিরাপত্তা
মেটার প্রধান উদ্বেগ হল ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া মানুষকে সংযুক্ত করতে এবং তথ্যের অ্যাক্সেসযোগ্যতা তৈরি করার জন্য অবিশ্বাস্য হাতিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এতে বিভিন্ন ধরণের আসক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। অপব্যবহার এবং হয়রানি সংক্রান্ত নিরাপত্তার উদ্বেগ কোন অংশে কম নয়। এই বিপদের উপরে, মেটাভার্সের নিমগ্ন প্রকৃতি বিশেষ উদ্বেগ যোগ করবে। গোল্ডম্যান বলেছেন "ভার্চুয়াল বিশ্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি অনেক বেশি দৃশ্যমান হবে এবং মনে হবে যেন তারা সত্যিই খেলোয়াড়ের সাথে খেলছে। এটি ভার্চুয়াল জগতের একাডেমিক গবেষণার দীর্ঘ ইতিহাসের মাধ্যমে নথিভুক্ত করা হয়েছে। যখন নিমগ্নতা একটি ভার্চুয়াল জগতে সামাজিকীকরণকে কাউকে অনলাইনে বার্তা পাঠানোর চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করে তোলে, এটিও অপব্যবহার, হয়রানি এবং ভয় দেখানোর প্রভাবগুলিকে আরও স্পষ্ট করে তোলে৷ লোকেরা মনে করে যেন এটি সত্যিই তাদের সাথে ঘটছে।" গোল্ডম্যান।
গোপনীযতা
আরেকটি উদ্বেগ হল মানুষের গোপনীয়তা। ভার্চুয়াল এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি ডিভাইসগুলির পরিধানযোগ্য প্রকৃতির কারণে, হার্ডওয়্যার কোম্পানিগুলি বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ করতে পারে। লিভারপুল হোপ ইউনিভার্সিটির AI এবং স্থানিক কম্পিউটিং এর অধ্যাপক ডাঃ ডেভিড রিড একটি সাক্ষাত্কারে বলেছেন, “যদি আপনি চিন্তা করেন যে এই মুহূর্তে একটি কোম্পানি WWW-তে যে পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ করতে পারে, তা মেটাভার্সের তুলনায় অতি নগন্য"।
১১/ মেটাভার্সের হুমকি
মেটাভার্সের ফলে বর্তমান বিশ্ব কাঠামো বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। পৃথিবী থেকে কায়িকশ্রম বিদায় নিবে ফলে মানুষের মধ্যে নানারকম দুরারোগ্য ব্যাধির সংক্রামক বেড়ে যেতে পারে। সীমাহীন স্বাধীনতার কারণে মানবমনে উদ্ভট রুচিবোধের জন্ম হতে পারে। যৌন কেলেংকারির ঘটনা চরম রুপ ধারন করতে পারে। বিশ্ব থেকে ধর্মীয় ধ্যান ধারণা কমে যেতে পারে। সবচেয়ে আশংকার বিষয় হলো মানুষের উপর রোবটিক্সের আধিপত্য বিরাজ করতে পারে। এসব কিছুই মানব সভ্যতা এবং কল্যাণের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।
সর্বোপরি বিজ্ঞানকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। মহান সৃষ্টিকর্তাই মানুষের মস্তিষ্কের উন্নয়ন ঘটান। তা থেকেই নির্গত হয় নতুন নতুন ধ্যান ধারণা এবং প্রযুক্তির উদ্ভাবন। নতুনকে জানার কৌতূহল থেকেই জন্ম নেয় নতুন বিশ্ব। অতীত হারিয়ে যায় কালের অতল গহ্বরে।
ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন --
কোরআনে বর্ণিত সাত আসমান সম্পর্কে বিজ্ঞান কী বলে
Source:
www.tbsnews.net
www.thedailystar.net
www.wix.com
crowdcreate.us
influencermarketinghub.com
Internet.