খাবার খেয়ে মানুষ বেচে থাকে আবার এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে নানাবিধ জটিলতার পাশাপাশি মৃত্যুও ঘটাতে পারে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন পুষ্টিবিধগন। হ্যা বন্ধু আজ আপনাকে জানাব এমন কিছু খাবারের কথা যে খাবার বহুল পরিচিত সুস্বাদু কিন্তু একটু অসচেতন হলে সেটিই আবার আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তো চলুন এক এক করে জেনে নেই।
খাদ্য উপাদান |
১/ পটকা মাছ
বাংলাদেশ চীন জাপান কোরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এই মাছ খুব জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু হিসেবে পরিচিত। এই মাছ মিঠাপানি ও লোনাপানি উভয় পরিবেশেই পাওয়া যায়। পটকা মাছ বা পাফার ফিসের সারাদেহে বিষক্রিয়া না থাকলেও এর পাকস্থলীর নির্দিষ্ট গ্রন্থিতে নিউরোটক্সিন থাকে যা সায়ানাইডের তুলনায় মারাত্মক। তাই এই মাছ ঠিকমতো প্রসেস করা না হলে মুহূর্তেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে মানুষ এমনকি কয়েক ঘন্টার মধ্যে মৃত্যও হতে পারে।
খালেদা ইসলাম অধ্যাপক ও পুষ্টিবিধ।
২/ মাশরুম
মাশরুম একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে রয়েছে এর হাজার হাজার প্রজাতি। এই মাশরুম খেলে-
১/ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২/ মাশরুমে থাকা কোলিন পেশির সক্রিয়তা ধরে রাখে।
৩/ স্মৃতি শক্তি বজায় রাখে ইত্যাদি।
হাজার জাতের মধ্যে বাংলাদেশে ৮-১০ টি জাতের চাষ হয়। কিন্তু বহুল পরিচিত বুনো মাশরুম ব্যাঙের ছাতা লিভার কিডনি বিকলাঙ্গের কারণ হতে পারেই বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিধ ড. খালেদা ইসলাম।
৩/ খেসারী ডাল
খেসারী ডাল আমাদের অনেকেরই পছন্দের একটি খাবার। হরহামেশা আমরা খেয়েও থাকেন। কিন্তু আপনি জানেন কি এই ডালে BOAA নামক এক প্রকার এলানাইন এমাইনো এসিড থাকে যা বিষাক্ত নিউরোটক্সিন উৎপন্ন করে। দীর্ঘদিন খেসারী ডাল খেলে এই এসিড নিউরো ল্যাথাইরিজম বা স্নায়ুবিক পঙ্গুত্ব ঘটাতে পারে। আর ল্যাথাইরিজম রোগ হলে-
১/ স্নায়ুবিক ডিজফাংশন হতে পারে।
২/ প্যারালাইসিস হতে পারে।
৩/ স্মৃতি শক্তি লোপ পেতে পারে।
৪/ আলু
আলু ছাড়া আপনি হয়তো একটি দিনও চিন্তা করতে পারেন না। মাছ মাংস কিংবা সবজি সব জায়গায় আলুর বিচরণ। কিন্তু আপনি জানেন কি আলুতে শেকড়ের জন্ম হলে সেই আলুতে গ্লাইকো এলকালয়েড এর জন্ম হয়। বিশেষকরে অনেকদিন আলু পড়ে থাকলে যখন আলুতে চারা গজায় তখনি এই টক্সিনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গাছের কাণ্ড বা পাথাও থাকতে পারে এই মরনঘাতক। বারডেম হাস্পাতালের গবেষক ও চিকিৎসক শামসুন্নাহার নাহিদ জানান এই ধরনের আলু খেলে ডায়রিয়া, মাথা ব্যাথা, কোমায় চলে যাওয়া এমিন কি মৃত্যুও হতে পারে। এই টক্সিন কোন মানুষের দেহে ৩-৬ মিলিগ্রাম প্রবেশ করলে সরাসরিই মৃত্যু হতে পারে বলে জানান এই পুষ্টিবিদ। এছাড়া আলুতে অনেক সময় সবুজ রঙের উপাদান দেখতে পাওয়া যায় যা কারসিনোজেন নামের উপাদান বহন করে। এই কারসিনোজেন ক্যান্সার সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
৫/ টমেটো
টমেটোর পাথা এবং কান্ডে যে এলকালাই থাকে তা কাচা টমেটোতেও লক্ষ্য করা যায় বলে জানিয়েছে পুষ্টিবিদেরা। এই এলকালাই পাকস্থলীর জন্য অতিমাত্রায় ক্ষতিকর। তাই কাচা টমেটো ভাল করে রান্না করা ছাড়া খাওয়া মোটেই উচিত নয়।
৬/ কাজু বাদাম
কাজু বাদাম অনেক পুষ্টিগুণ সম্মৃদ্ধ ও ব্যয় বহুল একটা খাবার যার রয়েছে দুটি জাত একটি মিষ্টি আর অন্যটি তিতো। তেতো কাজু বাদামে থাকে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড যা শরীরে হাইড্রোজেন সায়ানাইড তৈরি করে। তাই ভুলেও তেতো কাজু বাদাম খাওয়া উচিত না।
৭/ আপেল
আপেল অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপকারি ফল। বলা হয়ে থাকে যে ডাক্তারকে বিদায় জানাতে রোজ একটি করে আপেল খান। কিন্তু আপনি জানেন কি আপেলের বীচিতে থাকে মারাত্মক সায়ানাইড। বীচিসহ আপেল খেলে কিংবা বীচিসহ আপেলের জুস করলে তা হতে পারে ভয়ানক বিষক্রিয়ার কারণ। বীচি বাদে সম্পূর্ণ আপেলেই নিরাপদ।
৮/ কাচা মধু
আমাদের দেশে মধু একটা আজগুবি খাবার। কেন আজগুবি বললাম? কারণ বাজারে মধু কিনতে গিয়ে কোনটা ভ্যাজাল কোনটা খাটি এই নিয়ে আপনার মাথা চৌদ্দপাক খাবে। তাই অনেকসময় আমরা চেষ্টা করি সরাসরি চাকভাঙ্গা মধু পাওয়া যায় কি না। কিন্তু আপনি কখনও ভেবেছেন এই মধু মধু না হয়ে আপনার জন্য বিষ হতে পারে?? হ্যা বন্ধু মধু পাস্তুরিত না হলে তাতে অনেক রকমের বিষাক্ত টক্সিন থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছে পুষ্টিবিদেরা।
৯/ মটরশুঁটি ও শিমের বীচি
এটি আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। সারা বিশ্বেই এটি জনপ্রিয়। কিন্ত এই মটরশুঁটি ও শিমের বীচিতে ফাইটোহেমাগ্লুটামিন নামক ক্যামিকেল থাকে। যা মানুষের শরীরের বিভিন্নরকম জটিলতার পাশাপাশি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন রান্নার আগে অন্তত ১৫ মিনিট পানিতে সেদ্ধ করে পানি ফেলে রান্না করলে এই বিষ দূর হয়ে যায়।
১০/ কামরাঙ্গা
ভিটামিন সম্মৃদ্ধ একটি ফলের নাম কামরাঙ্গা। পুষ্টিবিধ আয়েশা সিদ্দিকা বলেন কিডনি এবং স্নায়ু তন্ত্রের সমস্যা থাকলে কোনভাবেই কামরাঙ্গা খাওয়া উচিত না।
১১/ কচু
কচু বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত সবজি এবং এর কান্ড ও পাথা শাক হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। কিন্তু ছায়ায় জন্ম নেওয়া ও বড় হওয়া কচুতে থাকে প্রচুর পরিমাণ অক্সালেট। এই অক্সালেট গলায় চুলকানির সৃষ্টি করে এবং অতি মাত্রায় সেবনে মৃত্যুও ঘটাতে পারে। তাই কচু জাতীয় খাবারের সাথে লেবু রাখুন তাতে অক্সালেট প্রশমিত হয়ে যাবে।
১২/ ডিম
বলা হয়ে থাকে "যদি সুস্থ্য থাকতে চান, প্রতিদিন একটিকরে ডিম খান"। ছোট থেকে বড় সবার কাছেই ডিম একটি মজাদার পরিচিত খাবার। এই ডিম আমরা বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি। তবে কাচা, হাফ সেদ্ধ এবং এক পাশ পোচ করা ডিম খেলে বিষক্রিয়া হতে পারে বলে মত দিয়েছেন জাতীয় পুষ্টি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর সম্নানিত বিজ্ঞানিগন। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
১৩/ ক্যানড বা প্রসেস ফুড
ব্যস্ততার কারণেই হোক বা অন্যকোন কারণেই হোক দিন দিন আমরা প্রসেসফুডের দিকে ঝুঁকছি। কিন্তু এই প্রসেসফুড বা ক্যানড ফুড সঠিক নিয়মে প্রস্তুত করা না হলে মারাত্নক হুমকির কারণ হতে পারে।
১৪/ শুকনো মাছ বা শুটকি
শুকনো মাছ বা শুটকি সংরক্ষন করার জন্য তাতে অনেকসময় সালফার ইউজ করা হয় যা ক্যান্সারের উদ্রেককারী হিসেবে পরিচিত। তাই শুটকি খাওয়ার পূর্বে তা ভাল করে প্রক্রিয়াজাত করে নেওয়া জরুরি।
...
ধন্যবাদ।।
#আদর্শখাদ্যতালিকা #toxicfood