ক্লান্তি বা অবসাদ দূর করার কার্যকরি উপায়। how to avoid & reduce tiredness

ক্লান্তি কি, ক্লান্তির প্রকারভেদ, কোন প্রকারের ক্লান্তি কেন আসে, যেকোন প্রকার ক্লান্তি থেকে বেচে থাকার উপায় কি, আমরা কি জানি? হ্যা পাঠক,  আজকে আমরা এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানব।

ক্লান্তি

কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন -"ক্লান্তি আমায় ক্ষমা কর প্রভু"। এই কথা বা গানের সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। কিন্তু ক্লান্তি বিষয়টি আসলে কি?

ক্লান্তি দূর করার কার্যকরি উপায় how to remove stresd & tiredneds Keno klanti ase Ki khele klanti dur hoy Klanti dur korar byayam Sexual tiredness remo


অক্সফোর্ড ডিকশিনারির তথ্যমতে ক্লান্তি বা শ্রান্তি হচ্ছে ঘুম বা বিশ্রাম নিতে চাওয়ার ইচ্ছা বা অবস্থা। 

সহজ করে বললে ক্লান্তি হচ্ছে আমাদের দৈহিক ও শারিরীক অবস্থা যে অবস্থায় একজন মানুষ বিশ্রাম নিতে চায় কিংবা ঘুমাতে চায়।

মেডিক্যাল সাইন্সের মতে ক্লান্তি বা টায়ার্ডনেস কোন একটি রোগের একক লক্ষ্মণ না বরং ক্লান্তি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ হতে পারে। তবে সাধারণত এটি নিদ্রাহীনতা, অপুষ্টি এবং অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে হয়ে থাকে।

কেন ক্লান্তি আসে

আমরা ক্লান্ত হলে শক্তি পাই না। আবার দুর্বল হলে ক্লান্তি অনুভব করি। তাহলে একথা স্পষ্ট যে, ক্লান্তিময় অবস্থা হচ্ছে শক্তির অপ্রতুলতা। অর্থাৎ কোন কারণে আমাদের ব্রেইন বা দেহ যদি আর সমানতালে আর শক্তি সরবরাহ করতে না পারে বা শক্তি উৎপাদন এর চেয়ে ব্যায়ের পরিমাণ বেশি হয় তবেই আমরা ক্লান্তি অনুভব করি। কেন আমরা ক্লান্ত হই কেন বডি টায়ার্ড হই সেটি জানার আগে চলুন জেনে নেই কি কি রকমের ক্লান্তি আমাদের ঘায়েল করতে পারে।

ক্লান্তি এর ধরণ

সার্বিক দিক বিবেচনা করে ক্লান্তি বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তারমধ্যে-

১/ শারীরিক ক্লান্তি

শরীরবৃত্তিয় ক্লান্তি বুঝার জন্য প্রথমেই আমাদেরকে বুঝতে হবে বডির শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে। কেননা শক্তি উৎপাদন বা সরবরাহ পর্যাপ্ত না হলেই একটি প্রাণী ক্লান্তি অনুভব করে।

আমরা নানান প্রকারের খাদ্য গ্রহণ করি। যেমন শর্করা, আমিষ এবং ফ্যাট বা চর্বি। আর এসব খাবার থেকেই আমরা শক্তি পাই। যেমন-

১ গ্রাম শর্করা থেকে পাই- ৪ ক্যালরি। 

১ গ্রাম আমিষ থেকে পাই- ৪.১ ক্যালরি। 

১ গ্রাম  চর্বি থেকে পাই- ৯ ক্যালরি। 

আবার শক্তির প্রধান উপাদান  ATP বা Adenosine Tri Phosphate. প্রোটিন লিপিড কার্বোহাইড্রেট আপনি যে খাদ্যই গ্রহণ করেন না কেন পাচক/হজমের পর খাদ্যের সরল উপাদান  হচ্ছে গ্লুকোজ।  গ্লুকোজ থেকেই গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে উৎপন্ন হয় ATP. এটাকে সহজ ভাষায় শ্বষণও বলা হয়।

বডিতে শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া

আমাদের বডি অসংখ্য কোষের সমন্বয়ে গঠিত। আবার কোষের ভিতরে রয়েছে জটিল সব কোষাণু। এসব কোষাণুতেই তৈরি হয় শক্তি। গ্লুকোজের অণুগুলো রক্তের সাথে মিশে কোষের সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে। সেখানেই বিভিন্ন এনজাইম ও হরমোনের প্রভাবে গ্লাইকোলাইসিস নামক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং পাইরুভিক এসিড বা পাইরুভেট নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থের উৎপন্ন হয়। শেষে পাউরুভেট এর সাথে কো-এনজাইম যুক্ত হয়ে এসিটাইল কো-এ উৎপন্ন হয়। এই এসিটাইল-কো-এ কোষের ভাইটাল অঙ্গাণু মাইটোকন্ড্রিয়াতে প্রবেশ করে। সেখানে ক্রেবস চক্র, ফ্যাটি এসিড চক্র এর মত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর সর্বশেষ ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের মাধ্যমে শরীর শক্তি গ্রহণ করে। যেহেতু মাইটোকন্ড্রিয়ায় শক্তি উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় সম্পন্ন হয় তাই মাইটোকন্ড্রিয়াকে শক্তির পাওয়ার হাউস বলে।

২/ মানুষিক ক্লান্তি

মানুসিক ক্লান্তি এক বিশেষ প্রকারের ক্লান্তি যা সরাসরি আমাদের ব্রেইনের সাথে জড়িত। অনেক সময় খেয়াল করলে দেখা যায় আমি হয়তো শারীরিক কোন পরিশ্রম করি নাই, হয়তো আমি পড়ছি, হয়তো কোন ব্যাপারে অনেক টেনশন হচ্ছে, কোন কারণে আমি নার্ভাস ফিল করছি, রাতের ঘুম ঠিকমত হয় নাই তখন আমাদের শরীরে যে ক্লান্তি অনুভব হয় সেটাই মানুসিক ক্লান্তি বা অবসাদ। মানুসিক ক্লান্তি সরাসরি আমদের শরীরের সাথে সম্পর্কিত না হলেও এটি একটি শরীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়ার অংশ।

মানুসিক ক্লান্তিতে শরীরে কি ঘটে 

মানুসিক ক্লান্তি মূলত ব্রেইনের কর্মহীনতা বা নিষ্ক্রিয়তাকে বুঝায়। তাহলে ব্রেইনও কি টায়ার্ড হয়। এর উত্তর হচ্ছে হ্যা ব্রেইনও টায়ার্ড হয়। আমাদের প্রতিটি অর্গানই টায়ার্ড হয়। যখন যে অংশে শক্তি উৎপাদন স্বাভাবিক মাত্রায় হয় না, তখনই সে অংশ ক্লান্তি অনুভব করে। যেমন অনেক্ষণ হাটার পর আমাদের হাত পা ক্লান্তি অনুভব করে। ঠিক তেমনি মস্তিষ্কের উপর চাপের মাত্রা অতিরিক্ত হলে ব্রেইনে থাকা কোষগুলো ক্লান্তি অনুভব করে। কিন্তু এর কারণ কি? কারণ- যখন আমরা অতিরিক্ত টেনশন বা মানুসিক চাপে থাকি, তখন আমাদের ব্রেইন অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে যায়, কিন্তু আমাদের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া বা কোষ মেকানিজম আগের মতই রয়ে যায়। ফলে আমাদের ব্রেইনের কোষগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্লুকোজ সরবরাহ করতে পারে না।

কি কি কারণে ক্লান্তি আসতে পারে

টায়ার্ডনেস আসার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর কোনটা আমাদের খাদ্যাভ্যাস এর সাথে জড়িত, কোনটা আমাদের পরিশ্রমের সাথে জড়িত, আবার কোনটা আমাদের পেশা এবং দৈনন্দিন অভ্যাসের সাথে জড়িত। তন্মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো-

১/ অধিক পরিশ্রম

যেকোনো পরিশ্রমেই আমরা ক্লান্ত হই। পরিশ্রম শারীরিক ক্লান্তির অন্যতম প্রধান কারণ।  পরিশ্রম করলে এনার্জি নষ্ট হয়। অধিক পরিশ্রমে অধিক ক্লান্তি আসে। কেননা পরিশ্রমের সাথে যে পরিমান শক্তি ক্ষয় হয় বা যে হারে ATP উৎপাদনের প্রয়োজন হয় বডি সে পরিমাণে তাল মিলাতে পারে না বিধায় ক্লান্ত হয়। যেহেতু শ্বষণ প্রক্রিয়ার সাথে আমদের হার্ট, ফুসফুসের অক্সিজেনেশনসহ কোষ মেকানিজমের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর দায়ী তাই পরিশ্রমের কারণে কোষ তার পর্যাপ্ত ক্রিয়া-বিক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে না ফলে শক্তি উৎপাদন ব্যাহত হয়।

২/ শারীরিক অপুষ্টি

বাংলা দৈনিক "দৈনিক প্রথমআলো" এর তথ্যমতে এদেশের প্রতি ৬ জন মানুষের মধ্যে একজন অপুষ্টির শিকার। আবার "স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড" - এর তথ্যমতে আমাদের দেশে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ নিয়মিত অপুষ্টিতে ভূগছে। পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে আমাদের বডি প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল পায় না। ফলে দেহকোষ নিস্তেজ হয়ে আসে। তখন কারণে অকারণে মানুষ পরিশ্রান্ত হয়ে যায়। কখনো অল্পতেই হাপিয়ে ওঠে।

৩/ অনিয়ন্ত্রিত যৌনভ্যাস

একটা নির্দিষ্ট সময়ে যখন আমরা যৌবনপ্রাপ্ত হই, তখনি আমাদের শরীরে কিছু বিশেষ হরমোন নিঃসৃত হতে শুরু করে এবং তা নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।  কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে বডির অন্যান্য হরমোন আর সেক্স হরমোন এক নয়। মেডিকেল সায়েন্সের তথ্যসূত্র অনুযায়ী ৬০ থেকে ৮০ ফোটা রক্তের মিনারেল মিলে তৈরি হয় ওয়ান ড্রপ cement  বা বীর্য। যারা পর্ণোগ্রাফি তে আসক্ত হয়ে porn video কিংবা sex video দেখে নিজেরা হস্তমৈথুনের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে তারা ভয়ানক এক ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করছে।

বীর্য সৃষ্টি  হয় ফ্রক্টোজ (একজাতীয় চিনি), দস্তা, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-১২, সামান্য শর্করা এবং অন্যান্য জটিল রাসায়নিক পদার্থ এবং খনিজ পদার্থ থেকে। আর এই ভিটামিন ও খনিজ পদার্থগুলো আমাদের শক্তি চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাই অনিয়ন্ত্রিত যৌনভ্যাসে যেমন বীর্য বা সিমেন্ট এর কোয়ালিটি নষ্ট হয়, ঠিক তেমনি দেহ ভেঙ্গে যায় দেহে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ভর করে

৪/ অতিরিক্ত মানুসিক চাপ বা টেনশন

আমরা ইতোমধ্যেই জেনে গেছি যে, মানুসিক ক্লান্তি শারীরিক ক্লান্তির চেয়েও ভয়ানক। আমরা যখন অতিরিক্ত stressed থাকি, মানুসিক tension এ থাকি কিংবা কোন কারণে depression এ থাকি তখন আমরা মানুসিক ক্লান্তি অনুভব করি। 

ক্লান্তি বা অবসাদ থেকে বাচার উপায়

এই মানুসিক ক্লান্ত থেকে বেচে থাকার জন্য কিছু অভ্যাস ও বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। যেমন-

- নিজেকে রোগমুক্ত রাখা

- অতিরিক্ত মানুসিক চাপ এড়িয়ে চলা।

- একা না থেকে আশেপাশের সবার সাঙ্গ লাভ করা।

- ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলা।

- পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করা।

- পর্যাপ্ত পানি পান করা।

- রাতে যথেষ্ট ঘুম বিশ্চিত করা।

- অযাচিত যৌনাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং

- নিয়মিত শরীর চর্চা করে নিজেকে ফিট রাখা ইত্যাদি। 

১/ ক্লান্তি দূরকারী ব্যায়াম

ব্যায়াম আপনার ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও পেশির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে জ্বালানি জোগায়। গবেষণায় প্রমাণিত যে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ক্লান্তি দূর করতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। Indoor ও outdoor exercise উভয় প্রকারের ব্যায়ামই টায়ার্ডনেস দূর করতে সাহায্য করে। তবে কিছু ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-

- নিয়মিত হাটা। 

- সম্ভব হলে সাতার কাটা।

- নিয়মিত নামাজ আদায় বা উপাসনা করা।

- সখের কাজ বা সৃজনশীল কোন কিছুতে নিজেকে ব্যাস্ত রাখা।

২/ ক্লান্তি দূরকারী খাবার

ক্লান্তিকে বিদায় জানাতে পরিমিত পুষ্টিকর আহারের বিকল্প নেই। কিছু খাদ্যাভ্যাস আমাদেরকে এ ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে। তাই-

-যথেষ্ট পানি পান করুন। গরমে পানিশূন্যতা ও লবণশূন্যতা আপনাকে ক্লান্ত করে দিতে পারে।

- গরমের দিনে পানির সঙ্গে ফলের রস, ডাবের পানি, লেবু পানি, টক দই ইত্যাদি খেতে পারেন। এতে তাতক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়।

- বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন একমুঠো বাদামে ম্যাগনেসিয়াম পাবেন, যা উদ্দীপনা বাড়ায়।

- পর্যাপ্ত আমিষ খাবেন। বিশেষ করে মাছ।

- দুধ খাবেন।

- ভিটামিন ডি আছে সূর্যালোকে, তাই বাইরে গিয়ে হাঁটুন। ভিটামিন ডি-এর অভাব কিন্তু অবসাদ বাড়াতে পারে।

- আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেকে এনারজেটিক রাখতে হলে তাজা ফলমূল ও রঙিন শাক-সব্জির কোন বিকল্প নেই। তাই আপনার খাদ্য তলিকায় পরিমিত ও নিয়মিত ফলমূল ও শাক-সবজি নিশ্চিত করুন।

ধন্যবাদ 

লেখাটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভূলবেন না।

AKMA

A Simple Man. Admin and Author of Esojani.com

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সাথেই থাকবেন, ইন শা আল্লাহ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন