মানুষ মুসলমান হয় দুই পদ্ধতিতে। এক জন্মসূত্রে আরেক ধর্মান্তরিত হয়ে। বাস্তবিক পক্ষে এগুলো কেবল নামেই মুসলমান, কাজে নয়। কেননা একজন মুসলিমকে প্রকৃত মুসলিম হতে হলে ইসলামের কিছু অত্যাবশকীয় বিষয় মেনে চলতে হয়।
ইসলামের প্রথম শর্তহলো পবিত্রতা অর্জন। আর পবিত্রতার প্রথম ধাপ হলো গোসল। গোসলে এমন ৩ টি কাজ রয়েছে যেগুলোকে ফরজ বলে। ফরজ আদায় ব্যাতিত গোসল হয় না। আবার ফরজ গোসল ঠিকমত আদায় না করলে পবিত্রতা অর্জন হয় না। সে অবস্থায় নামাজ কালাম যাই করা হোক না কেন তাতে পুণ্যের চেয়ে পাপই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা।
গোসলের ফরজ ৩ টি
১/ কুলি করা (গড়গড়াসহ)।
২/ নাকে পানি দেওয়া ( রোজা না থাকলে নাকের শক্ত হাড় পর্যন্ত)।
৩/ সমস্ত শরীর ভাল করে ধৌত করা (শরীরের কোন অংশই যে শুকনা না থাকে)।
গোসলের বিধান
ফরজ গোসল আদায় করা ফরজ। শুক্রবার ও ইদের দিন গোসল করা সুন্নত। প্রতিদিন গোসল করা মুস্তাহাব।
কখন গোসল ফরজ হয়
১/ সহবাসের পর।
২/ স্বপ্নদোষের পর।
৩/ হায়েজ (মহিলাদের মাসিকের পর) নেফাসের (বাচ্ছা জন্মদানের চল্লিশ দিন)পর।
৪/ যেকোনো কারণে বীর্যপাতের পর।
৫/ মৃত ব্যাক্তির গোসল দেওয়া জীবিতদের উপড় ফরজ।
আরও পড়ুন-
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যেভাবে ফরজ গোসল করতেন।
গোসলের পর পবিত্রতার ২য় শর্ত হচ্ছে। নিয়ম মেনে ওযু করা। অযু ইবাদতের পূর্বশর্ত। কিন্তু অযুর ফরজ আদায় না হলে অযু হয় না।
অজুর ফরজ ৪ টি।
১/ সমস্ত মুখ ধৌত করা
২/ দুই হাতের কুনুইসহ ধোয়া।
৩/ মাথা মাসেহ করা ( ৪ ভাগের ১ ভাগ)।
৪/ দুই পায়ের টাকনুসহ ধোয়া।
অজুর বিধান
যেকোন প্রকারের নামাজের এবং কোরআন তেলাওয়াতের পূর্বে অযু করা ফরজ। সবসময় অযু অবস্থায় থাকা সুন্নত।
ইমান আনার পর প্রথম যে জিনিস ফরজ হয় তা হলো নামাজ। দয়াল নবী (সাঃ) পবিত্র হাদিসে বলেন- হাসরের মাঠে সবার আগে নামসজের হিসাব নেওয়া হবে। আর নামজের এমন কিছু অত্যাবশকীয় হুকুম রয়েছে যেগুলোকে ফরজ ওয়াজিব বলে। নামাজের ফরজ-ওয়াজিব বাদ পড়ে গেলে নামাজ হয় না।
নামাজের ফরজ ১৩ টি।
সব মিলিয়ে নামাজের ফরজ ১৩ টি। যার মধ্যে নামাজ শুরুর আগে ৭টি এবং নামাজ আরম্ভের পর ৬ টি।
নামাজের বাহিরে ৭ টি।
১/ শরির পাক।
২/ কাপড় পাক।
৩/ নামাজের জায়গা পাক।
৪/ সতর ঢাকা। পুরুষের নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত আর মাহিলাদের হাতের তালু মুখমণ্ডল ও পায়ের তালু ব্যাতিত সারা শরীর ঢেকে রাখা সতর বা ফরজ।
৫/ কেবলা মুখি হওয়া।
৬/ ওয়াক্তমত নামাজ আদায় করা।
৭/ নামাজের নিয়ত করা।
নামাজের ভেতরে ৬ টি
১/ তাকবীরে তাহরীমা বলা।
২/ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া। অপারগ হলে বসে বা শুয়েও নামাজ আদায় করা যায়।
৩/ কেরাত পড়া। কোরআনে বর্ণিত সূরাগুলো ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তেলাওয়াত করা।
৪/ রুকু করা।
৫/ সেজদা করা।
৬/ শেষ বৈঠক করা।
নামাজের ফরজের বিধান
ফরজের কোন কাফফারা হয় না। কোন কারণে নামাজের ফরজ বাদ পড়ে গেলে বা ছুটে গেলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় আদায়কারী ব্যাক্তিকে পুণরায় নামাজ আদায় করতে হবে।
ওয়াজিব শব্দের অর্থ আবশ্যক। নামাজে পরপর ১৪ টি এমন হুকুম রয়েছে যে যেগুলো আদায় করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ব্যাতিরেখে নামাজ সম্পূর্ণ হয় না।
নামাজের ওয়াজিব ১৪ টি।
১/ সূরা ফাতিহা পড়া।
২/ সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পড়া।
৩/ রুকুতে দেরি করা। (কমপক্ষে ৩ বার তাসবীহ পড়া)।
৪/ রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
৫/ দুই সেজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা।
৬/ দরমিয়ানি বৈঠক। চার রাকাত নামাজের দুই রাকাতের পর আত্ত্বাহিয়্যাতু পরে যে বৈঠক করা হয়।
৭/ শেষ বৈঠকে আত্ত্বাহিয়্যাতু পড়া।
৮/ ইমামের জন্য কেরাত/তেলাওয়াত আস্তে ও জোরে পড়া।
৯/ বিতর নামাজে দোয়া কুনুত পড়া।
১০/ ২ ইদের নামাজে ৬ তাকবির বলা।
১১/ প্রত্যেক ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাত কেরাতের জন্য নির্ধারিত করা।
১২/ প্রত্যেক ফরজের তারতীব ঠিক রাখা।
১৩/ প্রত্যেক ওয়াজিবের তারতীব ঠিক রাখা।
১৪/ সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা।
নামাজের ওয়াজিবের বিধান
ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজের ওয়াজিব বাদ গেলেও নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। তবে অনিচ্ছাকৃত কারণে ওয়াজিব ছুটে গেকে সাহু সেজদার মাধ্যমে নামাজ আদায় করলে নামাজ আদায় হয়ে যায়।
সাহু সেজদার নিয়ম- শেষ বৈঠকে তাশাহুদ বা আত্ত্বাহিয়্যাতু পড়ার পর ডান পাশে সালাম ফেরানোর পর ভুলের মাশুল হিসেবে যে দুইটি সেজদা আদায় করে পূণরায় তাশাহুদ দরুদ পড়া হয় তাকে সেজদায়ে সাহু বলে।
আরও পড়ুন-
ইসলামে রোযার বিধান কি?
ইসলামে হজ্বের হুকুম কি?
ইসলামে যাকাতের বিধান কি?
ইসলামের ৫ টি স্তম্ভ সম্পর্কে না জানলে কম্পলিট মুসলমান হওয়া যায় না।