যে কারণে ফেইসবুক ব্যাবহার করলেই সর্বনাশ! এসোজানি। Curse of Facebook Using

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে ফেইসবুক। বিশ্বব্যাপি ইন্টারনেট এর কল্যাণে সারাবিশ্বে অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে এটি। অথচ মার্ক জাকারবার্গ এবং তার বন্ধুরা যখন ফেইসবুক এর উন্নয়ন ঘটায় তখন শুধু তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য বানিয়েছিল এই মাধ্যম। তাহলে প্রশ্ন হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে কিভাবে তা অনলাইন পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। সেবার নামে কিভাবে আপনার পকেট কেটে বিশ্ব ধনির তালিকায় ফেইসবুক। ফেইসবুকের গোপন পায়তারা কি, তাদের আয়ের উৎস কি, আজ এসব ব্যাপারে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করব। আশা করি শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকবেন। 

ফেইসবুক বিজনেস পেইজ, ফেইসবুক এড একাউন্ট, ফেইসবুক থেকে আয়, ফেইসবুক থেকে আয় করার সহজ নিয়ম, ফেইসবুক পেইজ মনিটাইজেশন, ফেইসবুক পেইজ মনিটাইজেশনের শর্ত,
যে কারণে ফেইসবুক ব্যাবহার করলেই সর্বনাশ! এসোজানি। Curse of Facebook  Using



ফেইসবুক বিজনেস পলিসি

ফেইসবুক বিজনেস পলসি আমাদের অনেকের কাছেই ক্লেয়ার না। ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে কিভাবে তারা আপনার আমার পকেট কেটে ভিলিয়ন ভিলিয়ন সম্পদের মালিক হয় তার খবর আমরা কতটুকই রাখি। যাহোক এবার ফেইসবুক বিজনেস পলিসি নিয়ে একটু কথা বলা যাক। ফেইসবুক যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাই তাদের বিজনেসকে ডেভেলপ করা হয়েছে সামজিক কর্মকাণ্ডকে ভিত্তি করে। বর্তমানে ফেইসবুক পলিসিকে প্রধানত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

/ বিজ্ঞাপন 

ব্যাবসা আর বিজ্ঞাপন একে অন্যের পরিপুরক। ব্যাবসার বিস্তার বা প্রসার এর জন্য যে প্রাচার মাধ্যম ব্যাবহার করা হয় তাই বিজ্ঞাপন। বর্তমান শিল্প বিপ্লবের যুগে আমরা প্রধানত দুটি ক্যাটাগিরির বিজ্ঞাপন দেখতে পাই- এক- অফলাইন ভিত্তিক

দুই- অনলাইন ভিত্তিক

ফেইসবুক বিজ্ঞাপন একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় অনলাইন ভিত্তিক বিজ্ঞাপন ব্যাবস্থা। যেখান থেকে ফেইসবুক তার সর্বোচ্চ আয় নিশ্চিত করে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ফেইসবুকে কোন এইজ লিমিট বা বয়স লিমিট নাই। যেকারণে যেকেউ তাদের এই বিজ্ঞাপনের সম্মুখীন হয়, যেখানে এই বিজ্ঞাপনের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এডাল্ট বা ১৮+ বিজ্ঞাপন।

২/ প্রমোশন

ফেইসবুক বিজনেস পলিসির অন্যতম একটি পলিসি হচ্ছে প্রমোশন পলিসি। দ্বিপাক্ষিক বা বহু-পাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট কোম্পানি বা অর্গানাইজেশনের ব্যাবসা বা এজেন্ডাকে প্রমোট করে থাকে ফেইসবুক। এটিও তাদের আয়ের অন্যতম উৎস। কিন্তু আশংকার ব্যাপার হচ্ছে তাদের এসব প্রমোশনের ক্ষেত্রে তাদের কোন যথাযথ সুরক্ষা বা ক্যাটাগরাইজ থাকে না। যারফলে নির্বিচারে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার গুলো তরুণ প্রজন্মের কাছে উন্মোচিত হয়ে যায়।

৩/ ডাটা সেল

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এই বিতর্ক বার বার উত্তাপিত হলেও ফেইসবুক বরাবরি তা অস্বীকার করে আসছে। তবে যেহেতু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পক্ষ থেজে একই দাবি উঠেছে তাই ফেইসবুকের এমন ন্যাক্কারজনক কাজের ইঙ্গিতকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তা হলো ফেইসবুক গোপনে তার ব্যবহারকারীদের তথ্য ও তত্ত্বকে বিক্রি করে থাকে। যাতে হুমকির মুখে পড়ছে কোটি কোটি ব্যাবহারকারীর নিরাপত্তা। তাহলে আপনি হয়তো মনের অজান্তে ফেইসবুকের ১০০% প্রাইভেসি মেনে আপনজনের একটা পিক বা ভিডিও শেয়ার করলেন, কিন্তু তা যদি কোন কারণে পাব্লিক হয়ে যায়??? ভাবা যায়????

৪/ পেইড সার্ভিস

ফেইসবুকের কিছু অপশনাল সার্ভিস রয়েছে। যেগুলো হয়তো আপনি চাইলে এড়িয়ে যেতে পারেন। আবার চাইলে ব্যাবহারও করতে পারেন। তবে ব্যাবহার করতে গেলে আপনাকে মোটা অংকের অর্থ খরচ করতে হবে এর পেছনে। ফেইসবুক দিন দিন তার এই পেইড সার্ভিসের পরিধি বৃদ্ধি করছে এবং একরিকম জিম্মি করা হচ্ছে ব্যাবহারকারীদেরকে। আর এই সুযোগে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে আপনার পকেটের টাকা। যার হয়তো আপনি কখনো খেয়ালই করেন নি।

কেন ফেইসবুক এত জনপ্রিয়

তথ্য প্রযুক্তির বর্তমান যুগে ‘ফেসবুক’ হচ্ছে অন্যতম জনপ্রিয় একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেউসবুকের সর্বশেষ  পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেসবুকের একটিভ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ বিলিয়ন এর অধিক বা ৪০০ কোটি ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। ২০২১ সালেই ফেসবুকে প্রায় ৬০ মিলিয়ন লোকাল বিজনেস পেজ তৈরি হয়েছে। ব্যাবসা জগতে পৃথিবীর  ৪২ % ব্যবসায়ী ফেসবুককে তাদের বিজনেসের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ধরে নিয়েছেন।  তাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনো কোম্পানির ব্র্যান্ডিং কিংবা প্রমোশনের ক্ষেত্রে এই প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব কতখানি। গ্রাহকদের কাছে পৌছানোর জন্য কিংবা পছন্দের শীর্ষে থাকার জন্য লক্ষ লক্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান  প্রতিদিন ফেসবুক ব্যবহার করছে। নতুন আবিষ্কার, নেতৃত্ব তৈরি, বিক্রয় বৃদ্ধি এবং আনুগত্য অর্জনের জন্য ফেইসবুক উত্তর উত্তর বিস্তার লাভ কারছে। মোটা দাগে কারণগুলোর মধ্যে-

ব্যাপকতা

এখন পর্যন্ত  চীন-রাশিয়ার মত যুক্তরাষ্ট্রের ঘোর বিরোধী কতিপয় দেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব দেশই কমবেশি ফেইসবুক ব্যবহার করছে। যেকারণে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই যা কিছুই আলোচনায় আসুক না কেন তা ফেইসবুকের কল্যাণে দ্রুতই ছড়িয়ে পরছে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ব তা হলো বিশ্বের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি আজ হুমকির মুখে।

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিও এর ২০২০-২০২১ এর তথ্যমতে শীর্ষ মেটা ব্যাবহারে-

  1. ভারত — ৪১.৬৬ কোটি। 
  2. যুক্তরাষ্ট্র — ২৪ কোটি।
  3. ইন্দোনেশিয়া — ১৭.৬৫ কোটি। 
  4. ব্রাজিল — ১৩.৯ কোটি 
  5. ফিলিপাইন — ৯.১ কোটি 
  6. মেক্সিকো — ৭.৮ কোটি। 
  7. ভিয়েত্নাম  ৭.৫৯ কোটি।
  8.  থাইল্যান্ড — ৫.৮৫ কোটি। 
  9. জাপান — ৫.৫৮ কোটি। 
  10. পাকিস্তান — ৪.৯২ কোটি। 

সহজলভ্যতা

ফেইসবুক হচ্ছে আপাত দৃষ্টিতে ফ্রি যোগাযোগ মাধ্যম যার সাহায্যে মানুষ তার আবেগ অনুভূতি থেকে শুরু করে নিত্যদিনের ঘটে যাওয়া ইচ্ছা-অনিচ্ছা শেয়ার করতে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ফ্রি এণ্ড ফাস্ট এক্সেস। যারফলে যেকোনো বয়সের যেকেউ চাইলেই ফেসবুকে এক্সেস নিতে পারে। একারণে নীতি নৈতিকতার ব্যাপারগুলো সামনে চলে আসে। একজন ৬০ বছর বয়সী এবং একজন ১৬ বছর বয়সীকে ফেইসবুক বা মেটা একই রকম ট্রিট করে। যেটা কখনই একটা ভদ্র সমাজে কাম্য হতে পারে না।

ট্রেণ্ডিং

বর্তমান বিশ্ব ট্রেণ্ডিং বিশ্ব। ঘটনা ঘটার সাথেই সেটা ট্রেণ্ড হয়ে যায়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এর পিছনে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা পালন করে। এতে করে নানা গুজব ছড়ানোর যতেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। এমন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির জন্য ফেইসবুকের মত প্লাটফর্মগুলোই দায়ী। 


ফেইসবুকের আয়ের উৎস কি

ফেসবুকের সর্বোচ্চ আয় হয় বিজ্ঞাপ থেকে।বিজনেসউইক.কমের মতে ফেসবুকের ব্যানার বিজ্ঞাপনে পাঁচ ভাগের একভাগ ক্লিক পড়ে অন্য ওয়েবের থেকে।উদাহরণসরূপ, যেখানে গুগল  ব্যবহারকারী তাদের সার্চের ফলাফলের প্রথম বিজ্ঞাপনের লিংকগুলোতে ক্লিক করে গড় হিসেবে ৮% (৮০০০০ ক্লিক প্রতি এক মিলিয়ন সার্চে)।অপরদিকে এপল, গুগল,  ইউটিউব,  আমাজান ও টুইটারের মত জায়ান্ট কোম্পানিগুলো মেটা বা ফেইসবুকের সাথে পরস্পর সংযুক্ত রয়েছে।এছাড়াও বিজ্ঞাপন প্রমোশন ডাটা সেল বা পেইড সার্ভিসের মাধ্যমে ফেইসবুক মেটা আয় করে থাকে।

ফেইসবুকের গোপন ধান্ধা

ফেইসবুক এর মূল টার্গেট গ্রুপ হচ্ছে তরুন প্রজন্ম। সাধারণত তারা একটু ইমুশোনাল হয়ে থাকে। আর মেটা তাদের ইমোশনালকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। সখ থেকে আসক্তিতে পরিণত হচ্ছে। পড়াশোনায় অমনোযোগী বানানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ফেইসবুক এভাবে বিস্তৃতি লাভ করলে একটা সময় অশ্লীলতা আর মূর্খতা মাথাছাড়া দিয়ে উঠবে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ বিখ্যাত বিজ্ঞানি ও গবেষক হাওয়ার্ড জ্যাকবসন বলেন আগামী ২০ বছরের মধ্যে শিশুদেরকে মূর্খ বানাবে ফেইসবুক বা মেটা।

Esojani.com
হাওয়ার্ড জ্যাকবসন

যদি জ্যাকবসনের আশংকা সত্যি হয় তাহলে বিশ্বের জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতি  অপেক্ষা করছে বলাই যায়। 

পরিশেষে, প্রযুক্তিকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই কারণ আগামীর বিশ্ব প্রযুক্তির বিশ্ব। তবে প্রযুক্তির আগ্রাসন নিয়ে প্রযুক্তি নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থ্যাকে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি, আমাদেরকেও যেকোনো প্রযুক্তির বাস্তবতা রিয়ালাইজ করে অতিরিক্ত মোহ বা আসক্তি ত্যাগ করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য টেকসই ব্যাবহার নিশ্চিত করতে হবে।

<<<<<<<<<<<<<<<<<<ধন্যবাদ>>>>>>>>>>>>>>>>


AKMA

A Simple Man. Admin and Author of Esojani.com

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সাথেই থাকবেন, ইন শা আল্লাহ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন