গেলো সপ্তাহে ফেইসবুকে একটা খবর চোখেই পড়তেই দেখলাম- বিকাশে ৩০ হাজার টাকা পাঠালেই কুরিয়ারে মিলছে ১ লক্ষ টাকা। ঠিক একইভাবে পত্রিকা কিংবা নিউজ চ্যানেল ওপেন করলে আমরা প্রায়ই দেখি জাল টাকার রম্য ব্যাবসা। জাল টাকার সংঘবদ্ধ চক্র যারা দিনের পর দিন জাল নোটের ব্যাবসা করে আসছে। কখনো আইনশৃংখলা বাহিনী গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনছে। মুক্তি পেয়ে আবার জড়িয়ে পরছে একই কর্মকাণ্ডে। সমস্যা হচ্ছে তাদের এই চক্রান্তের শিকার হচ্ছি আমি আপনি আমরা।
জাল টাকা কি
জালটাকা কোন দেশের সরকার তথা যাথাযত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া কিছু অসাধু লোকের মাধ্যমে উৎপাদিত অবৈধ কারেন্সি যা ঐ দেশের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত নয়। ব্যাপারটা আরো ক্লেয়ার করার জন্য আমাদেরকে জানতে হবে আমরা যে টাকায় লেনদেন করি বা বিনিময় করি সেই টাকা কীভাবে আমাদের কাছে আসে।
বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠান টাকা ছাপায় থাকে টাকশাল বলে যার প্রাতিষ্ঠানিক নাম- বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন। এটি ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা গাজীপুর এ ৬৬ একর জায়গা নিয়ে ১৯৮৯ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করে। আবার এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ সরকার তথা সরকারের অর্থবিভাগ। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকার চাইলেই যত খুশি টাকা ছাপাতে পারে না। তার জন্য চাহিদা ও যোগানের উপর নির্ভর করে মানতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংক তথা বিশ্বব্যাংকের আরো কিছু নিয়ম।
জাল টাকা ব্যাবসায়ীরা এসবের কোন কিছুর তোয়াক্কা করে না। কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনে গোপনে কারো বাসায় অথবা কোন ঝুপড়ি ঘরেও বানাতে পারে ইচ্ছামত টাকা।
জাল চক্রের টার্গেট কারা
জালটাকা শহর কিংবা গ্রাম যেকোন স্থানেই ছাপানো যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শহরে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় এর তৎপরতা লক্ষ করা যায়। তবে ওদের মূল টার্গেটে থাকে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষ। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের হাট বাজার গুলো।
জাল টাকার বৈশিষ্ট্য
বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে তারা এমন সব মেশিনের সরবরাহ করে থাকে যে ঐ মেশিনের ছাপানো টাকা যে জাল তা সনাক্ত করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও এমন কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো জাল করা অনেক ব্যায়বহুল বিধায় তারা সেগুলো করতে পারেনা বা করে না। নিছে এক এক করে বাংলাদেশের প্রচলিত নোটের জাল সনাক্তকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলব। এই ব্যাপারগুলো খেয়াল করলে আপনি চোখে দেখেই বলে দিতে পারবেন কোনটা জাল টাকা কোনটা আসল টাকা।
জালনোট ধরার উপায়
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারীকৃত সারকুলার অনুযায়ী জালনোট সনাক্তের ৭ টি প্যারামিটার রয়েছে। যেমন-
১/ জালটাকা খসখসে হয় না
জাল্টাকা নরমাল প্রিন্টারে ছাপা হয় বলে সেগুলোতে বিল্ট-ইন প্রিন্ট করা সম্ভব হয় না। আসল টাকায় বিল্ট-ইন প্রিন্ট থাকে বিধায় আসল টাকা হাতে স্পর্শ করলে স্পষ্টত খসখসে হয় তথা ছাপানো প্রত্যেকটা লেখা ও ছবিকে উচু নিচু মনে হয়।
২/ জালটাকায় ডানপাশে বৃত্ত ও সমান্তরাল রেখা ঠিক থাকে না
৩/ জালটাকা জলচাপ ও মনোগ্রাম অস্পষ্ট থাকে
বাংলাদেশের প্রচলিত প্রত্যেক প্রকারের নোটে ৩ টি করে জলচাপ থাকে।
১/ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিচ্ছবি।
২/ বাংলাদেশ ব্যাংক এর মনোগ্রাম
৩/ ঐ টাকার মূল্যমান।
আসল টাকায় সাদা বৃত্তে ঐ মনোগ্রামগুলো অল্প আলোতেই স্পষ্ট বুঝা যায়। যেটা জাল টাকায় পরিস্কার বা স্পষ্ট থাকে না।
৪/ জালটাকা কোণায় মূল্যমানের রং পরিবর্তন হয় না
প্রচলিত প্রত্যেকটি নোটের উপরের ডান কোণায় টাকার মূল্যমান ইংরেজিতে (100,200,500,1000) এক বিশেষ রঙের হয়, যা আলতো করে নাড়া দিলে তার কালার পরিবর্তন হয়। সাধারণত সেটা হালকা লাল বর্ণ থেকে হালকা সবুজ বর্ণের হয়।
৬/ জালটাকায় শনাক্তকারী সুতা উঠে আসে
টাকা সনাক্ত করার সবচেয়ে বিশ্বস্ত পন্থা হলো টাকায় বিদ্যমান সিকিউরিটি সুতা। একটি সিকিউরিটি সুথা ২ টি জিনিসের জলচাপ থাকে।
১/ 🇧🇩 বাংলাদেশ ব্যাংক এর মনোগ্রাম
২/ টাকার মূল্যমান
আসল টাকায় সুতাটি এমনভাবে বিল্ট-ইন প্রিন্ট করা থাকে যাতে কোনভাবেই তা উঠে আসে না। ধারালো কোনকিছু দিয়ে চেষ্টা করলেও ঐ সুতা উঠানো যায় না। অপরদিকে জাল টাকায় অল্প ঘষাতেই তা উঠে আসে এবিং বিকৃত হয়ে যায়।
৭/ জালটাকা সনাক্তকরণ মেশিনে রেডিয়েশন দেয় না
ফাইনালি উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে যদি জাল টাকা সনাক্ত করা কঠিন হয় তবে ইউভি লাইট বা আল্ট্রা-ভায়োলেট লাইটের মাধ্যমে জাল টাকা সনাক্ত করা যায়। টাকায় এক ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা সাদারণ চোখে দেখা না গেলেও UV লাইটে জ্বল জ্বল করে রেডিয়েশন দেয়, যা দেখে খুব সহজেই বুঝে নেওয়া যায় কোনটা জাল আর কোনটা আসল টাকা। যে মেশিনটি সাধারনত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ লক্ষ করা যায়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে ইদানীং খুব ছোট আকারের একধরনের মানি ডিটেক্টর ইউ ভি লাইট পাওয়া যায়। যেগুলো দামে খুব একটা বেশি নয়। তাই চাইলে আপনিও একটি লাইট পকেটে রাখতেই পারেন।
শেষ কথা হচ্ছে দালাল বা জাল নোট চক্রের দৌরাত্ম এতটাই বেড়ে গেছে যে বর্তমান এ কেবল একটি বিষয় দিয়ে জাল সনাক্ত কএয়া যায় না। চোখ-কান খোলা রেকেই হাতে স্পর্শ করে জাল টাকা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।
মনে রাখবেন-
জাল টাকা ছাপানো, হাতবদল, লেনদেন ও সংরক্ষণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই এ ব্যাপারে নিজে সচেতন থাকুন এবং অন্যকেউ সচেতন রাখুন। ভুলক্রমে কারো হাতে চলে আসলে ততৎক্ষনাৎ এটিকে ধ্বংস করুন। কাউকে চক্রান্তে জড়িত বলে সন্দেহ হলে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর দারস্থ হোন।
৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ ধন্যবাদ৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷
Khub valo laglo...
উত্তরমুছুনnotun kichu janlam
উত্তরমুছুন