মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরানে মধুর বা মৌমাছির (সূরা আল নাহল ) নামে একটি পূর্ণ সূরা নাযীল করেছেন।
মৌচাকের খাঁটি মধু |
এই সুরায় মধুর গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইরশাদ করেন-
النَّحۡلِ اَنِ اتَّخِذِیۡ مِنَ الۡجِبَالِ بُیُوۡتًا وَّ مِنَ الشَّجَرِ وَ مِمَّا یَعۡرِشُوۡنَ* الثَّمَرٰتِ فَاسۡلُکِیۡ سُبُلَ رَبِّکِ ذُلُلًا ؕ یَخۡرُجُ مِنۡۢ بُطُوۡنِهَا شَرَابٌ مُّخۡتَلِفٌ اَلۡوَانُهٗ فِیۡهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡ ﴿۶۹
- "আপনার রব মৌমাছিকে আদেশ দিলেনঃ পাহাড়ে, গাছে এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরী কর, এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে আহার কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে সুস্বাদু পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে বিভিন্ন রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।" – সূরা আন-নাহল(১৬), আয়াতঃ ৬৮-৬৯
অন্যদিকে দয়াল নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন- মধুতে আরোগ্য নিহিত আছে।’ (সহীহ বুখারি: ৫২৪৮)।
- মা আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে মধু ও মিষ্টান্ন খুব প্রিয় ছিল। (সহীহ বুখারি: ৫২৫০)।
- অন্য এক হাদিসে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘
- যে ব্যক্তি প্রতি মাসে অন্তত তিন দিন সকালে মধু চেটে খাবে, তার বড় ধরনের কোনো রোগ হবে না।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৪৪১)।
এসব ব্যাতিরেখেও আমরা যদি বর্তমান বিজ্ঞানের দিকে তাকাই তাহলে মধুর গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মধুত গাঠনিক উপাদান বিশ্লেষণ করে আমাদেরকে নানাবিধ উপকারের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মধুর গাঠনিক উপাদান
- খাটি মধুর উপাদানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
- গ্লুকোজ = ২৫-৩৭%
- ফ্রুক্টোজ= ৩৪-৪৩%
- সুক্রোজ =০.৫-৩%
- মেন্টোজ= ৫-১২%
- এমাইনো এসিড = ২২%
- এনজাইম= ১১%
- মিনারেল ২৮%
- প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালরি =২৮৮
- প্রোটিন = নেই
- চর্বি= নেই
- ভিটামিন= বি কম্পলেক্স ইত্যাদি।
মধুর উপকারিতা
১/ তাপ ও শক্তির উত্তম উৎস।
২/ মধু সহজে পাচ্য, কেননা মধুতে থাকা ডেক্সট্রিন হজমে সহায়তা করে।
৩/ মধুতে থাকা ভিটামিন বি কম্পলেক্স ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে সাহায্য করে।
৪/ মধুর কপার, আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজ হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে রক্ত শূন্যতায় মধু বিশেষ উপকারি।
৫/ এজমা বা শ্বাসকষ্ট রোগী মধু সেবনে উপকৃত হয়।
৬/ যাদের ঘুম আসেনা তারা রাতে শোয়ার আগে ২ চা চামচ মধু এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেয়ে দেখেন ফলাফল আপনিই বলতে পারবেন।
৭/ নিয়মিত মধু খেলে যৌন শক্তি অটুট থাকে।
৮/ শারীরিক মানুষিক অস্থিরতায় হালকা গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ম্যাজিকের মত অস্থিরতা চলে যায়।
৯/ গাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টি শক্তি ভাল থাকে।
১০/ যেসব আপুরা রূপচর্চা করেন তাদের জন্য মধুর মাস্ক যাদুকরী ভূমিকা রাখে।
১১/ মধু খেলে গলার স্বর সুন্দর ও মধুর হয়।
১২/ তারুণ্য ধরে রাখতে মধুর বিকল্প নাই। আসল মধুতে বিদ্যমান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।
১৩/ নিয়মিত মধু সেবনে চুল পড়া বন্ধ হয়। দাঁতের গোড়া বা মাড়ি শক্ত হয়। ফলে রক্ত পড়া সেরে যায়।
১৪/ দুই চামচ মধুর সাথে এক চামচ রসুনের রস মিশিয়ে খেলে উচ্চ রক্তচাপ৷ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
১৫/ মধুতে থাকা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে হেফাজত করে ইত্যাদি।
কখন মধু খাওয়া থেকে সাবধান থাকবেন
মধু যেহেতু বন্য পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করা হয় তাই এতে নানারকম ব্যাকটেরিয়া কিংংবা ছত্রাকের সংক্রমণ থাকতে পারে। আবার মৌচাক ভাঙ্গার সময় সাবধানতা অবলম্বন না করলে মৌয়ালের বডি থেকেও ঘটতে পারে সংক্রমণ। তাই মধু সংংগ্রহ বা কেনার আগে এই ব্যাপারগুলো মাথায় রাখতে হবে। আবার মনে রাখতে হবে-
১/ মধুতে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাস নামক ব্যাকটেরিয়া ও বিভিন্ন ছত্রাক থাকার সম্ভাবনা থাকে বিধায় এক বছরের কম শিশুকে মধু খাওয়ানো উচিত না।
২/ শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য, অলসতা এবং খাওয়ার অরুচি থাকলে মধু খাওয়ানো উচিত না।
৩/ কোনভাবেই অতিরিক্ত মধু খাওয়া ঠিক না। কারণ -
√ অতিরিক্ত মধু খেলে ডায়রিয়ায় এবং বমি হতে পারে।
√ ঝাপসা দৃষ্টি ও পেশি দূর্বলতা দেখা দিতে পারে।
√ শরীরে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
√ ওজন বেড়ে যেতে পারে।
√ নানাবিধ পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে।
৪/ ভেজাল মধুতে বিভিন্নরকম রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত থাকে তাই যেকোন ভেজাল মধু খেলে শরীরের মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। তাই মধু সংগ্রহ বা কেনার আগে অবশ্যই মধুর বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে তবেই কেনা উচিত।
১০০%খাঁটি মধু চিনার কার্যকরী উপায়
ইউটিউব বা ফেইসবুকে অনুসন্ধান করলে বিভিন্নজনের হাজারো পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায় যে কিভাবে মধুর বিশুদ্ধতা যাচাই করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো সেগুলো আসলে কতটা কার্যকরী। আজ আমরা এমন কিছু পদ্ধতির কথা বলব, যার সাহায্যে আপনি শতভাগ নিশ্চিত হতে পারবেন। তো চলুন জেনে নেই, ভেজাল মধু সনাক্ত করব কিভাবে।
১/ বুড়ো আঙুলের পরীক্ষা
এক ফোটা মধু বুড়ো আঙ্গুলের নখে নিলে যদি মধু গড়িয়ে পড়ে তবে ঐ মধু আসল নয়।
২/ পানির পরীক্ষা
এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মধু ঢেলে দেন। যদি মধু সাথে সাথেই পানিতে মিশে যায় তবে মধু খাটি নয়।
৩/ আগুনের পরীক্ষা
খাঁটি মধু এক প্রকার দাহ্য পদার্থ। তাই একটা দিয়াশলাই এর কাটিতে অল্প মধু মিশিয়ে ম্যাচে ঘষে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করুন। যদি মধু সহ ম্যাচের কাটি জ্বলে তবে সেটি খাঁটি।
৪/ ভিনেগারের পরীক্ষা
দুই-তিন ফোটা ভিনেগার এবং সামান্য পানি অল্প মধুর সাথে মিশিয়ে হালকা করে ঝাকিয়ে নেন। যদি মধুতে ফেনা উৎপন্ন হয় তবে সেটি ১০০% খাঁটি নয়।
৫/ তাপমাত্রার পরীক্ষা
১০০% খাঁটি মধুতে তাপ দিলে তা খুব সহজেই কেরামেলের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু ভেজাল মধু কখনোই কেরামেলের মতো ফেটে ফেটে যাবে না বরং এতে কেবল বুদবুদ উঠবে।
৬/ মোমবাতি পরীক্ষা
সামান্য মধু নিয়ে মোমবাতির আগুনে জ্বালানোর চেষ্টা করুন। যদি জ্বলে ওঠে তবে তা খাঁটি। অন্যথায় সেটি পানি বা চিনির সীরা মিশ্রিত।
৭/ ব্লটিং পেপার পরীক্ষা
এক টুকরা ব্লটিং পেপারে একটুখানি মধু ঢেলে নিন। যদি কাগজটি সম্পূর্ণ মধু শুষে নেয় তিবে বুঝতে হবে মধুটি ভেজাল মিশ্রিত।
৮/ ফ্রিজে রেখে পরীক্ষা
১০০% আসল মধু দীর্ঘদিন ফ্রিজে রাখলেও জমাট বাঁধে না। ভেজাল মধু বসে যায়।
৯/ ফেনা পরীক্ষা
নকল বা ভেজাল মধুতে ফেনা হয়।
১০/ স্বাদ-গন্ধ পরীক্ষা
ভেজাল মধু টক টক স্বাদ বিশিষ্ট কিংবা খুব ঝাঁঝালো হয়। এর স্বাদ অতিরিক্ত মিষ্টি হয়।
বি. দ্র. সবগুলো পরীক্ষা একসাথে করা সম্ভবপর নাও হতে পারে। সেজন্য সাধ্যের মধ্যে পরীক্ষা করে মধুর বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।
তবে মনে রাখতে হবে অঞ্চল এলাকা এবং ফুলের ধরনের ভিন্নতায় মধুর গুণা-গুণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
আপনার এবং আপনার পরিবারের খাদ্য তালিকায় মধু নিশ্চিত করুন। ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন এই প্রত্যাশায় আজ এখানেই বিদায় চাইছি। লেখাটি শেয়ার করে অন্যদেরও জানার সুযোগ করে দিন। লেখা নিয়ে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখতে ভুলবেন না।
আল্লাহ হাফেয
মধুতে কি কি উপাদান থাকে, মধুতে কোন ধরনের শর্করা থাকে, মধুতে কত ক্যালরি, মধুতে কি কি উপাদান আছে, মধুতে কি পিপড়া লাগে, মধুতে কি আগুন ধরে, মধুতে কোন এসিড থাকে, মধু খাওয়ার নিয়ম, মধু খাওতয়ার উপকারিতা, মধু ও গরম পানির উপকারিতা, মধু খেলে কি গ্যাস হয়, পুরাতন মধুর উপকারিতা, মধুর ক্ষতিকর দিক, খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা, সুন্দরবনের খাটি মধু, মধু চাষ পদ্ধতি, মৌমাছি চাষ করার উপায়, ভেজাল মধু চেনার উপায়, কোন ফুলের মধু ভাল, মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়, মধুর ব্যাবহার, মধুর রাসায়নিক উপাদান কি
Alhamdulillah onek kichu janlam. Thanks for kind information.
উত্তরমুছুনMaa Sha Allah
উত্তরমুছুন