যাকাত ইসলামের মৌলিক ইবাদত সমূহের মধ্যে একটি। ইসলাম যে পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত, যাকাত তার মধ্যে তৃতীয় স্তম্ভ। ইসলামী বিধান মতে কারো নিকট নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলে তার উপর যাকাত প্রদান করা ফরজ বা আবশ্যক। নিসাব হচ্ছে দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সমগ্রী বাদ দেয়ার পর সাড়ে বায়ান্ন তোলা পরিমান রূপা বা সাড়ে সাত ভরি পরিমান স্বর্ণ থাকলে অথবা এর সমমূল্যেরব্যবসায়িক পণ্যের মালিকানা থাকলে তাকে যাকাতের নিসাব বলে। নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলে তার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ পরিমান সম্পদ বা ২.৫০% হারে যে পরিমান সম্পদআসে তা যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হয়।
কারা যাকাত পাবেন ঃ
যাকাত কারা পাবেন এ বিষয়ে আল্লহ্ তা’লা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতটি পর্যালোচনা করলে যাকাত প্রদানের ৮টি খাত পাওয়া যায়। এ গুলো হচ্ছে (১) ফকির (২) মিসকিন (৩) যাকাত আদায়কারী ও হেফাযতকারী (৪) ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য কোন অমুসলিম (৫) দাস মুক্তির জন্য (৬) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি (৭)আল্লাহ্র রাস্তায় এবং (৮) মুসাফির।
যাকাতের ধর্মীয় গুরুত্ব ঃ
ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল সালাত ও যাকাত। আল্লাহ্ তা’লা বলেন, “যারা যাকাত দেয় না এবং তারা পরকালও অস্বীকারকারী” (সূরা হা-মীম-সিজদা, আয়াত-৭)। আর পরকাল অস্বীকার করলে এক জন মানুষ কাফের হয়ে যায়। হযরত আবু বকর রা. এর খিলাফত কালে তিনি যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন।
যাতাত সম্পদর মহব্বত কমিয়ে আল্লাহ্র মহব্বত বাড়ায় ঃ
স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে সম্পদের প্রতি একটা আকর্ষণ থাকে। এ আকর্ষণ যখন অস্বাভাবিক হয়ে যায় তখন সম্পদ পাবার জন্য মানুষ সুদ,ঘুষ, আত্মসাৎ, চুরি, ডাকাতি ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি সহ বিভিন্ন প্রকার অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। কিন্তু যাকাত এক গুরূত্বপূর্ণ আর্থিক ত্যাগ। এ আর্থিক ত্যাগ লোভী, অহংকারী, স্বেচ্ছাচারী, দুর্নীতিবাজদের অন্তরে ত্যাগের উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। যেহেতু এ ত্যাগ আল্লাহ্র জন্য হয়ে থাকে সেহেতু যাকাত মানুষের অন্তর থেকে
সম্পদের মহব্বত কমিয়ে আল্লহ্র মহব্বত বৃদ্ধি করে।
যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব ঃ
যাকাত আদায়ের ফলে দরিদ্রদের হাতে অর্থ আসে। এতে যে দরিদ্র লোকটা অর্থের অভাবে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই , রাহাজানি করতো সে যাকাতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থে তার স্বচ্চলতা আসায় সে এ সব অসামাজিক কাজ কর্ম থেকে বিরত থাকে। এতে সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়।
যাকাত অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি ঃ
যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনীদের হাত থেকে কিছু টাকা দরিদ্রদের হাতে আসে। এতে ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য কিছুটা হলেও কমে আসে। আজ অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর জন্য বিশ্বব্যাপি নানা কর্মসূচী গ্রহন করা হচ্ছে। তাও পুরোপুরি সফল হচ্ছে না। সঠিকভাবে যাকাত আদায় করতে পারলে, যাকাতের অর্থ দিয়ে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচী গ্রহন করে সহজেই অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা যায়। ক্রেতার সংখ্যা ধনীদের তুলনায় দরিদ্ররাই বেশি। যাকাতের মাধ্যমে দরিদ্রদের হাতে অর্থ আসলে অর্থনীতির ত্বত্ত অনুযায়ী দরিদ্রদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে, বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়ে, উৎপাদন বাড়ে, মুনাফা বাড়ে, অর্থনীতিতে গতি আসে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। এতে পণ্য উৎপাদনকারী ধনীরাও লাভবান হয়। ইসলামী অর্থনীতিবিদদের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে সঠিকভাবে যাকাত আদায়
করতে পারলে আট বছরের মধ্যে দেশে কোন দরিদ্র লোক থাকবে না।
যাকাত বিপর্যয় থেকে অর্থনীতি ও দেশকে সুরক্ষা দেয় ঃ
নবী করীম স. বলেন, “ যে লোকেরা যাকাত দিতে অস্বীকার করে আল্লহ্ তাদের কঠিন ক্ষুধা ও দুর্র্ভিক্ষে নিমজ্জিত করে দেবেন” (বায়হাকি, হাদিস নং ৬১৯০)। সুতরাং মানব সমাজকে দুর্ভিক্ষের মত
কঠিন বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার উপায় হলো যাকাত আদায় করা।
যাকাত প্রদান পদ্ধতির বিকৃতি ঃ
বর্তমানে যাকাত প্রদান পদ্ধতি ভিক্ষা প্রদানের পদ্ধতিতে রূপ নিয়েছে। কাউকে ১০০/২০০ টাকা বা একটা শাড়ি বা লুঙ্গি প্রদান করা হয়। এ অল্প টাকা সে অল্প সময়েই খরচ করে ফেলে বা শাড়ি বা লুঙ্গিটা ব্যবহার করে ফেলে। এতে তার অর্থিক অবস্থা পূর্বের মতই দরিদ্র রয়ে যায়। এতে যাকাতের মূল উদ্দেশ্য দরিদ্র বিমোচন ব্যহত হলো। যেহেতু এখন ইসলামী রাষ্ট্র ব্যাবস্থা নেই , এ অবস্থায় ব্যক্তি বা কয়েক জনের সমন্বয়ে যাকাত ফান্ড গঠন করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কোন প্রকল্প গ্রহন করে দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে বা কাওকে পর্যাপ্ত অর্থ দিয়ে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে।
যাকাত অসহায় ও দরিদ্রের অধিকার ঃ
যাকাত প্রদান করা দরিদ্র লোকের প্রতি ধনী লোকের কোন দয়া বা অনুগ্রহ নয়। বরং তা হলো ধনীদের সম্পদের উপর দরিদ্রের প্রাপ্য বা অধিকার। আল্লাহ্ তা’লা বলেন, “ আর তাদের (ধনীদের) সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতের অধিকার রয়েছে (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত নং ১৯)।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সম্পদশালী বক্তি তার সম্পদ ভোগ করার
পূর্বেচিন্তা করবে যে, এতে অসহায়দের অধিকার আছে। তাদের অধিকার অবশ্যই দিতে
হবে। অন্যথায় সমুদয় সম্পদ তার জন্য অপবিত্র হযে যাবে। পরিনামে তাকে পরকালে
কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ্ তা’লা বলেন, “ আর যারা স্বর্ণ ও রূপা (সম্পদ)
জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহ্র পথে খরচ করে না তাদের কঠিন শাস্তির সংবাদ দিন”
(সূরা তওবা, আয়াত নং ৩৪)
Allah sobaike bujhar towfiq dan korun
উত্তরমুছুনAllah maf koruk
উত্তরমুছুন