সেদিন মসজিদের হুজুরকে দেখলাম মিম্বরের
পিছনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। মাদ্রাসার হুজুরকে টং দোকান থেকে সিগারেট কিনতে
দেখে আমি মোটেও অবাক হই না। যেদিন ষাটোর্ধ চাচাকে কাঁশতে কাঁশতে ধুমপান করতে
দেখলাম, দেখলাম শ্বাস নেওয়ার কষ্টকে নিমিষেই ছাপিয়ে যাচ্ছে তাঁর বিড়ির ধোঁয়া। গলির
মাথায় কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় স্কুল পড়ুয়া ছেলেটা কেন সিগারেট খায় আমার মাথায় ধরে
না। আজকাল তো মেয়েরাও কোন অংশে কম না। মোদ্দা কথা সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে এই
অহেতুক ব্যাপারটা এতটাই বিস্তার লাভ করেছে যে, মসজিদের খতিব কিংবা মাহফিলের বক্তাও
এর বিরুদ্দ্বে জোর বয়ান করেন না। কিন্তু প্রশ্ন হলো ধূমপান করা হালাল নাকি হারাম???
ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
ঠিক এই প্রশ্নের আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক, মূলত কোন
কারনে মানুষ ধূমপান করে?
আসলে এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। কেননা আপনি
ধূমপায়ীদের লক্ষ্য করলে দেখবেন-
তারা সুখে থাকলে ধূমপান করে। কষ্টে থাকলেও ধূমপান
করে। ব্যাস্ততার ফাঁকে যেমন সিগারেট লাগে ঠিক তেমনি অবসরে থাকলেও সুখটান দিতে হয়।
হয়তো প্রথমে সখের বসে কিন্তু পরে আসক্ত হয়ে যায়।
এবার আসি এই ব্যাপারে কোরান-হাদীস কি বলে। তবে কোন ধুমপায়ী
ইমামের কাছে ধুমপানের মাসালা জানতে যাবেন না। মনে রাখবেন, সবাই সবকিছু তার অনূকুলে
চায়। আর সেই স্বার্থে নিজ নিজ যুক্তি খাঁড়া করে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, যুক্তি
দিয়ে ইসলাম বা ধর্ম চলে না। ইসলাম চলে শরীয়তের বিধিবদ্ধ কিছু সুনির্ধারিত নিয়ম
কানুন ধারা। তা সত্তেও এমন কিছু বিষয় উদ্ভব হতেই পারে যেগুলো সুরাহা করার জন্য ইজমা
কিয়াসের দরকার হয়। অর্থাৎ কোরান হাদীসে সেগুলোর সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা(নাম উল্লেখ
করে) নেই।
তাহলে সিগারেট তথা ধূমপানেরে ব্যাপারে আমরা কী সিদ্ধান্ত নিব?
চলুন কয়েকটি পয়েন্ট খেয়াল করা যাক-
১/ এটা সবারই জানা এমনকি যেকোন সিগারেট –এর প্যাকেটের গায়েই লিখা থাকে-
ধূমপান মৃত্যু ঘটায় বা ধূমপান ক্ষতিকর বা ধুমপানের কারনে
স্ট্রোক হয় বা ধূমপান ক্যান্সারের কারন ইত্যাদি। আবার আল্লাহ পাক বলেন,
“তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না”।[বাকারা-১৯৫]
২/ সিগারেট বা ধূমপান একটি নেশাজাতীয় অভ্যাস আবার দয়াল নবী করিম (সাঃ) বলেছেন,
“যেকোন নেশার বস্তুই মাদক আর প্রত্যেক নেশার জিনিসই হারাম”। [মুসলিম-২০০৩]
৩/ একসাথে অনেকগুলো সিগারেট খেলে নেশা হতে বাধ্য। এ ব্যাপারে রাসুলে করীম (সাঃ) বলেন-
“যা অধিক সেবন করলে নেশা সৃষ্টি হয় তা কম সেবন করাও হারাম”। [তিরমিযি-১৮৬৫, আবু দাঊদ-৩৬৮১]
৪/ সিগারেট
বিষাক্ত কখনো কোন পবিত্র জিনিস হতে পারে না। পবিত্র আল কোরয়ানের সূরা আল আরাফে আল্লাহ
রাব্বুল আ’লামিন বলেন-
“তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল ও অপবিত্র বস্তু হারাম করা হয়েছে”। [আরাফ-১৫৭]
৫/ সিগারেট স্রেফ অপব্যয় ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়। আবার আল্লাহ সুভাহানাহু তাআলা বলেন- নিশ্চয়ই যারা অপব্যায় করে তারা শয়তানের ভাই। [সূরা ইসরা-২৭]
৬/ সিগারেটের ধোঁয়া যে কতটা বিরক্তিকর যেটা একজন অধুমপায়ীই কেবল বলতে পারে।
এ ব্যাপারে রাসুল(সাঃ) বয়ান করেন-
“যে ব্যক্তি আখিরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।"
[বুখারী]
(৭) সিগারেট কোনরকম পুষ্টিকর কিংবা ক্ষুধা নিবারণ মূলকও কোন কিছু নয়। আবার মহান রাব্বুল আলামীন ফরমান- “জাহান্নামীদের খাবার প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন, এটা তাদের পুষ্টিও যোগাবে না ক্ষুধাও নিবারণ করবে না”। [গাশিয়াহ-৭]
??
আসলে এটা নিয়ে সরাসরি কোন
নির্ধেশনা না থাকায় এটা নিয়ে ভিন্নমত হতে পারে। কিন্তু সার্বিক আলোচনা থেকে
ধর্মীয়, সামাজিক ও মানবিক দিক চিন্তা করে এবার আপনারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিন।
হালাল
নাকি হারাম???????
সবশেষে,
রাব্বুল আলামিনের দরবারে পানাহ চাই, আল্লাহ যেন আমাদেরকে এ সর্বনাশা নেশা থেকে দুরে থাকার তৌফিক দান করুন।
আমিন।