ভ্যাক্সিন কি?
যে বস্তু কোন প্রাণির দেহে কোন নির্দিষ্ট রোগের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ঐ রোগের আক্রমণ থেকে প্রাণিকে রক্ষা করে সেটাই ভ্যাক্সিন। সাধারণত এটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। তবে কোন কোন ভ্যাক্সিন এমন রয়েছে যে কোন কোন ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিন মুখ দিয়ে বা স্প্রে করেও প্রয়োগ করা হয়। ভাক্সিন দেওয়ার এই সিস্টেম কে বলে ভ্যাক্সিনেশন।
ভ্যাক্সিন আবিস্কারের ইতিহাস
সর্বপ্রথম ১৭৯৬ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানি এডয়ার্ড জেনার মানুষের জন্য স্মলপক্সভাইরাসের কাছাকাছি কাউপক্স ভাইরাস থেকে ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেন। তার আগে এশিয়ান ফিজিশিয়ান রা শুকনো ক্রাস্ট( পাউরুটির বাইরের শক্ত অংশ) ব্যাবহার করে ভ্যাক্সিনেশন করতেন যখন কারো স্মল্পক্স হতো। এতে অনেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও কারো কারো ক্ষেত্রে তা একেবাএই কাজ করত না। এমতাবস্থায় জেনার যে ভ্যাক্সিন আবিস্কার করলেন তা ছিল জেনেটিক্যাল্লি স্মল্পক্স এর মতি কিন্তু মানব শরীরের জন্য শতভাগ নিরাপদ এবং স্মল্পক্স এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।
The first vaccination of the world. |
১৮৮০ সালে ফরাসি মাইক্রোবায়োলজিস্ট লুইস পাস্তুর ব্যাসিলাস ব্যাক্তেরিয়া ব্যবহার করে এক ধরনের ভ্যাক্সিন আবিস্কার করেন যার সফল প্রয়োগ করেছিলেন ভেড়ার মারাত্মক রোগ এন্ত্রাক্স এর বিরুদ্ধে। তারও ৪ বছর পর, পাস্তুর র্যাবিস(জলাতংক) রোগের ভ্যাক্সিন আবিস্কার করেন। এভাবেই আধুনিক পৃথিবীতে ভ্যাক্সিন এর যাত্রা শুরু হয়।
ভ্যাক্সিন কিভাবে তৈরি হয়?
অন্যান্য মেডিসিনের মত পৃথিবীর কোন ভ্যাক্সিনই ১০০% নিরাপদ নয়। কারণ যেকোন ওষুধ কিনবা ভ্যাক্সিন একটি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড মেনে প্রস্তুত করা হয় কিন্তু মানুষের শরীরের কন্ডিশন ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সবার এক নয়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে থাকতে পারে কো-মরবিড কন্ডিশন। তাই যেকোন ভ্যাক্সিনই কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দিতে পারে। এব্যাপারে জেনে শুনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই ভ্যাক্সিন নেওয়া উচিত। যাহোক এ পর্যায়ে আমরা জানব এই ভ্যাক্সিন আসলে কিভাবে তৈরি হয়।
১/ যে রোগের ভ্যাক্সিন আবিস্কার করতে হবে প্রথমেই তার ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া সম্পর্কে তার ভ্যারিয়ান্ট সমর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। ডিএনএ সিকুয়েন্স জানতে হবে। এবং বর্তমানে এই কাজটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় কম্পিউটারএর সাহায্যে করা হয়ে থাকে।
২/ প্রায় একই ভ্যারিয়েন্ট বা জ্বিন সিকুয়েন্সকে ভ্যাক্সিনের উপাদান হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে ঐ উপাদানকে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিষ্ক্রিয় করা হয় যাতে সেটি মানুষের দেহে সক্রিয় হতে না পারে। এমনকি এর কোন রেসিউডিউয়াল ইফেক্টও না থাকে। কিন্তু বাস্তবে তা কোনঅদিন সম্ভব না।
৩/ ল্যাব ট্রাইয়ালঃ ভ্যাক্সিন রেডি হয়ে গেলে দফায় দফায় সেটিকে ল্যাব্রেটরি ট্রায়াল এর প্রয়োজন হয়। সেটি হতে পারে কম্পিউটার এল্গরিদমের সাহায্যে কিংবা কোন প্রাণি ইদুর গিনিপিগ ইত্যাদির শরীরে প্রয়োগ করার মাধ্যমে।
৪/ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালঃ ল্যাব্রেটরি ট্রায়ালের পর প্রয়োজন হয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অর্থাৎ এবার মানুষের শরীরে প্রয়োগ করার পালা। কিছু নির্দিষ্ট মানুষকে নির্বাচিত করে তাদের দেহে পুশ করা হয়। যাদেরকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয় তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারীতে রাখা হয় এবং বডির কন্ডিশন পর্যবেক্ষন করা হয়। ফিনালি একশন রিয়েকশনের মাত্রা সন্তুষ্টজনক (১০০% কখনও হয় না) হলেই কেবল তা স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থা বাণিজ্যিকভাবে উতপাদনের অনুমতি লাভ করে।
ভ্যাক্সিন কিভাবে কাজ করে?
ভ্যাক্সিন রোগ হওয়ার আগেই নিতে হয়। আমাদের শরীরের শ্বেত রক্ত কণিকা বা হোয়াইট ব্লাড সেল ফ্যাগোসাইটোসিস নামক প্রক্রিয়ায় রোগ জীবাণু হজম করে রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। প্রাত্যহিক জীবনে চলতে ফিরতে আমরা অসংখ্য রোগ জীবাণু বহণ করে থাকি। আশার কথা হচ্ছে তা সবই ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ধ্বংস হয়ে যায়। আর তাই আমরা তা অনুভব করতে পারি না। এই জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা ( আল্লাহ রাব্বুল আলামিন) এর শুক্রিয়া করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু যতসামান্য জীবাণু যেগুলো অতিমাত্রায় শক্তিশালী সেগুলকে ধ্বংস করা আমাদের বডি সেল এর পক্ষে যখন সম্ভব হয় না তখনি ঐ সেলগুলো রোগের জন্ম দেয়। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এমন সিস্টেম দিয়েছেন যে অপরিচিত কোন কিছু বডিতে প্রবেশ করলেই বডি তার বিরুদ্ধে মারা মারি শুরু করে এবং গরম হয়ে যায়( যেটাকে আমরা জ্বর বলি)। একইভাবে ভ্যাক্সিনের উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অপরিচিত থাকে। যদিও সেটা নিষ্ক্রিয় থাকে কিন্তু বডি সেটা বুঝতে পারে না। বডির সেলগুলো এটাকে ঘায়েল করার জন্য আক্রমণ শুরু করে। তাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। ভ্যাক্সিন একটি অ্যান্টিজেন। এই অ্যান্টিজেন-এর বিরুদ্ধে রক্তে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অ্যান্টিবডি উতপন্ন হয়। পরবর্তীতে যখন সত্যি সত্যি ঐ রোগের জীবানূ বডিতে প্রবেশ করে তখন ঐ অ্যান্টিবডি খুব সহজেই ঐ জীবানু তথা ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়াকে মেরে ফেলতে সাহায্য কিরে।
ভ্যাক্সিন গ্রহণে সতর্কতা
১/ ভ্যাক্সিন গ্রহণের পূর্বেই এর সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
২/ অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৩/ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।
৪/ সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় উত্তেজিত হবেন না।
কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে?
১/ হালকা জ্বর হতে পারে।
২/ ইঞ্জেকশনের স্থানটি লাল ও ফোলে যেতে পারে।
৩/ রুচি কমে যেতে পারে।
৪/ বমি-বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
৫/ কিছু এলার্জিক রিয়েকশন হতে পারে।
৬/ মারাত্মক ক্ষেত্রে খিঁচুনি হতে পারে।
৭/ কোন কোন ক্ষেত্রে প্যারালাইসিস বা ব্রেইন ড্যানাজ হতে পারে।
মনে রাখতে হবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা মাত্রই নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অথবা চিকিতসকের সরণাপন্ন হতে হবে। সচেতন হোন , নিজে ভ্যাক্সিন নিন নিজে সুস্থ্য থাকুন আপনজনকে সুস্থ্য রাখুন।
.
লেখাটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
https://www.esojani.com/2021/08/function-of-vaccine-and-precaution.html
ধন্যবাদ।।