মোবাইল ও মানুষ
যদি জিজ্ঞেস করা হয় সারাদিন কর্ম ব্যাস্ত থাকার পর রাতে ঘুমানোর ঠিক আগ মুহূর্তে আপনি কোন কাজটি করেন? ভোর বেলায় যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন চোঁখ মেলে প্রথম কোন কাজটি করেন? নিশ্চয়ই উওর দিবেন মোবাইল ফোন ব্যাবহার করেন। বর্ত্মান সময়ে মোবাইল ফোনের এন্ড্রয়েড ভার্স্নের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্য-নৈমত্তিক বিভিন্ন সফটওয়ার। যেগুলোকে আমরা মোবাইল এপস বলে থাকি। অফলাইন কিংবা অনলাইন সারাক্ষিন যে জিনিস্টা আমাদের ব্রেইনের নিউরনগুলোকে আলোড়িত করে তা হয়তো কখনি ঠের পাননি আপনি। প্রযুক্তির বেড়াজালে অবচেতন মনে কখন যে আসক্ত হয়ে পড়েছেন তা হয়ত বুঝতেই পারেন নি। নতুবা বুঝার চেষ্টাও করেন নি। এখন আপনার মনে হতেই পারে যে আপনি এমন না।
মোবাইল রেডিয়েশন মারাত্মক ক্ষতিকর |
আসুন একটা উদাহরণের মাধ্যমে জিনিস্টা আরেকটু ক্লেয়ার করে দেই। আপনি যে বয়সের হোন না কেন? যে পেশার হোন না কেন?যদি একজন স্মার্ট ফোন ব্যাবহারকারি হয়ে থাকেন তবে চলুন একটা গেইম খেলি- মনে মনে প্রতিজ্ঞা করুন আগামী তিন দিন ইচ্ছা করেই আপনি ফোন ব্যবহার করবেন না। এটাও ভাবতে পারেন যে ফোন আবিস্কারই হয়ই নি। এখন কেমন বোধ হচ্ছে? বার বারই ফোনটার কথা মনে হচ্ছে না তো? হাতটা কেমন চুল্কাচ্ছে না তো? হ্যা, এটাই আপনার আসক্তির প্রধান লক্ষন।
এবার আসল কথায় আসি মোবাইল ফোন পৃথীবির এমন এক আজীব চীজ, তা হয়তো আবিস্কারও কোনদিন ভাবতে পারেন নি। ছোট বেলায় দেখতাম মানুষ হাত ঘড়ি দেখে সময় বলছে, ব্যাটারী চালিত রেডিও এর সাহায্যে খবর শুনছে, শুক্রবারে ঘরভর্তি মানুষ বিটিভির সাদা কালো বাংলা সিনেমা দেখছে, ১২ বোল্টের টেপ রেকর্ডার এর সাহায্যে ক্যাসেট প্লেয়ার চালাচ্ছে, কেউ আবার ভাড়া করে ভিসিয়ার এনে রাতভর সবাই মিলে সিনেমা দেখছে। কী যে একটা উতসব মুখর পরিবেশ ছিল? কিন্তু আজ প্রযুক্তির কল্যাণে সব হাড়াতে বসছে। সবাই আজ প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের বদলে নিচ্ছে। আর এই বলদানো বা পরিবর্ত্নের পিছনে যে জিনিষটা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে সেটা হলো স্মার্টফোন। এর শোভায় পৃতীবি আজ হাতের মুঠোয়।যদিও আবেগ অনুভূতি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই এতটাই আসক্ত হয়ে পরছে যে দিনের এক মূহুর্তও মোবাইল ফোন ছাড়া ভাবতে পারে না।
মোবাইল রেডিয়েশন
মোবাইল একটি অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। যা সেলুলার নেটওয়ার্কের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। রেডিও ওয়েভ তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে মূলত একস্থান থেকে অন্যস্থান যোগাযোগের জন্য আবিস্কার এই আজিব বস্তুর। ব্যাটারিচালিত এই আজিব বস্তুতে থাকে একটি টান্সিভার। যেটি একই সাথে ডাটা প্রেরন ও গ্রহন করতে সাহায্য করে থাকে। যেহেতো সেলফোন সেলুলার নেটোয়ার্ক পুঁজি করে পরিচালিত হয়, তাই রেডিয়েশন ছাড়া এটি চলতে পারে না।
আমাদের বেশিরভাগ মানুষই দিনের বড় একটি সময় মোবাইল ফোনে কাটিয়ে দেন, কিন্তু খুব কম জনই ভাবেন বা জানেন যে এগুলো তাদের শরীর বা স্বাস্থ্যের উপর কতটা প্রভাব ফেলছে?
হাতের মোবাইল থেকে যে তেজস্ক্রিয় রশ্মি থাকে বা তা থেকে যে পদার্থ আসে, তা শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর? ফোনে থাকা লেডের কারণে কি টিউমার হতে পারে? এবং এসব থেকে পরিত্রানের কি কোন উপায় আছে? বেশ কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের নানা প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এখনো অবধি সব প্রশ্নের উত্তর পুরোপুরি পাওয়া যায়নি।
আমরা জানি, মোবাইল ফোন সাধারনত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েভের উপর ভিত্তি করে কাজ করে যা স্বল্প ক্ষমতার বিকিরণ ব্যবহার করে। আমাদের আশেপাশে এরকম নানাবিধ বিকিরণ ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির এক গবেশনায় বলা হচ্ছে, এই মোবাইল ফোন এরকম বেতার তরঙ্গ মানুষের শরী রের কোষের উষ্ণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।রেডিয়েশন ব্রেন টিউমার, মাথা বা গলার টিউমারের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই কী ন্য?
কেন ভয়ানক?
স্মার্টফোন ছাড়া আজকাল জীবনের কথা চিন্তাও করা যায় না। আর সারাক্ষণ এটি আমাদের সাথেই থাকে। ফোনর থেকে বেরিয়ে আসা রেডিয়েশন প্রবেশ করছে আমাদের শরীরে। আর এর জন্য আমাদের স্বাস্থ্যও বিরুপ প্রতক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। এখন জানিয়ে দিব কোথায় কোথায় ফোন রাখলে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
প্যান্টের পিছনের পকেটে ফোন রাখেন? - এর ফলে যে রেডিয়েশন বের হয় তা থেকে থেকে বেড়ে যায় আপনার পায়ের ব্যথা।
প্যান্টের সামনের পকেটে ফোন রাখেথ? - বিভিন্ন মেডিকেল রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে যে যারা ফোন সাম্নের পকেটে রাখলে পুরুষদের স্পর্ম কাউন্ট কমে যায়।
সার্টের পকেটে ফোন রাখেন? - এর ফলে আপনার উপরের হার্টের ক্ষতি হতে পারে। কারন ফোন থেকে যে রেডিয়েশন বের হয় সেটা হারটের জন্য ্মারাত্মক ক্ষতিকর।
রান্নাঘর বা আগুনের কাছাকাছি ফোন রাখবেন না। - ফোন ব্লাস্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ঘটতে পারে ভয়ানক দুর্আঘটনা।
বাচ্চাদের থেকে ফোন রাখুন দূরে রাখুন - বাচ্চাদের সামনে ফোন রাখা ্মোটেও ঠিক না। শিশুরা অনেক্ষন ফোন নিয়ে খেলা করলে তাঁদের হাইপারঅ্যাকটিভিটি, ডিফিসিট ডিসঅর্ডার-এর মতো অসুখ দেখা দিতে পারে।
নিজেকে সেইফ রাখবেন কিভাবে
ফোনে যেখান্টাতে অ্যান্টেনা থাকে সেখানে সবচেয়ে বেশি বিকিরণ ছড়ায়। একটা সময় আমরা অ্যান্টেনাযুক্ত ফোন দেখতে পেতাম। কিন্তু বর্ত্মানে এসব আর দেখা যায় না। আধুনিক ফোনগুলোয় ফোনের ভেতরে এই অ্যান্টেনা বসানো থাকে।
আবার বেশিরভাগ মানুষ যখন ফোন ব্যবহার করে তখন অ্যান্টেনা মাথার খুব কাছাকাছি থাকে। কিন্তু এই অ্যান্টেনা মাথার যতো কাছে থাকে, ততই ঝুঁকিও বাড়তে থাকে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মোবাইল ফোনের কাছাকাছি শরীরের যেসব কোষ থাকে, সেগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর দূরের কোষ তুলনামুলক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কিভাবে নিজা সেইফ থাকবেন, এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
১।প্রথমত চেষ্টা করতে হবে যত সম্ভব মোবাইল টাকে দূরে রেখে কথা বলার। অর্থাৎ ডাইরেক্ট কানের কাছে নিয়ে কথা না বলা। এজন্য আপনি দূর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র যেমন ইয়ারফোন, ব্লুটুথ ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এতে সরাসরি রেডিয়েশন এর ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়। রাতে কথা বলা শেষ হলে মোবাইল ফোন পাশে রেখে ঘুমানো যাবে না। চেষ্টা করতে হবে কয়েকফিট দূরে রেখে। পারলে একবারে বন্ধ করে ঘুমানো।
২। আমরা যেহেতু কথা বলতে পছন্দ করি আর তাই দিনের অনেক সময় আমরা মোবাইল ফোনে কথা বলে সময় পার করে দিই। এরফলে আমাদের রেডিয়েশনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার ছাড়া উপায় থাকে না।একটানা কথা না বলে মোবাইলে একটা কল টাইম ডিউরেশন সেট করতে পারি এতে নির্দিষ্ট সময় পর পর কল কেটে যাবে। আমরা কলের পরিবর্তে ভয়েস মেসেজ আদান প্রদান কিংবা টেক্সট মেসেজে কথা বিনিময় করতে পারি।
৩। মনে রাখবেন মোবাইলে লো ব্যাটারি কিংবা বার বার নেটওয়ার্ক ফেল করা নিয়মিত ঘটনা। এই সময় ফোনে কল করা থেকে বির থাকাই উত্তম। কেননা যখন মোবাইলে চার্জ একদম কম থাকে তখন মোবাইল থেকে রেডিয়েশন বেশি নির্গত হয়। এই সময় ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। আর খুব জরুরি না হলে এই অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকবেন। খুব জরুরি হলে টেক্সট করা যেতে পারে। এতে বিপদের মাত্রা কমে যাবে।
৪। সম্ভব হলে ঘরের দরজা জানালা সব সময় খুলা রাখুন। বদ্ধ ঘর অর্থাৎ ছোট বাসা বা গাড়ির ভেতরে এছাড়া লিফটের ভিতরে চেষ্টা করবেন মোবাইল ফোনে কথা না বলার। এই সময় মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশন খুব তীব্র মাত্রায় প্রতিফলিত হয়ে শরীরে বেশি ক্ষতির প্রতিক্রিয়া ঘটায়। তাই খুব বেশি দরকার না হলে এই সময় কথা বলা আমাদের উচিত না।
৫। ছোট বচ্চা বা শিশুদের থেকে থেকে যতটা সম্ভব এই মোবাইল ফোন দূরে রাখার চেষ্টা করুন। কারণ শিশুদের ক্ষেত্রে এই মোবাইল রেডিয়েশন বিশেষভাবে ক্ষতিকর। তবে বর্তমানে বাচ্চাদের আবদার এর সাথে পাল্লা দিয়ে না পেরে তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন দামী দামী স্মার্টফোন আর নিজেরা যন্ত্রনা হীন থাকতে চাই।। এই ভুল কাজটা করা যাবে না। এতে তাদের শারীরিক ও মানুসুক উভয় প্রকার ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
৬। যারা গর্ভবতী মাদের উচিত মোবাইল ফোনে বেশি কথা বলাটা এড়িয়ে যাওয়ার আর ইন্টারনেট পারলে কম ব্যবহার করা। কেননা এই সময় তারা শারীরিকভাবে কিছুটা দূর্বল থাকে। এই দূর্বল শরীরে তেজস্ক্রিয় রশ্মি আরো বেশি ক্ষতি করে। রেডিয়েশন শক্তি সরাসরি ক্ষতি করে।
উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো প্রমাণ করে যে মোবাইল রেডিয়েশন সত্যিকারে আমাদের শরীরের জন্যে খুব বিপজ্জনক একটি দিক। কিন্তু আমরা বর্তমানে মোবাইল এর উপর এতোটা আসক্ত হয়ে গেছি আমরা মোবাইল ব্যবহার না করলে চলতেই পারিনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এ বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে অতিরিক্ত মাত্রায় ফোনে কথা বললে মাথায় ঝিমঝিম করে, কানে ব্যাথা করে, ব্রেইনে নিউরনের সমস্যা হয় ও ব্রেইনের কোষের সমস্যা দেখা দেয়। আর তাই আমরা এখন থেকে সাবধান হয়ে স্বল্প পরিসরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হবে।
মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়, মোবাইল টাওয়ার কিভাবে কাজ করে, মোবাইল তরঙ্গ, কোন ফোনে রেডিয়েশন বেশি ফোনের রেডিয়েশন জানার উপায়, মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন স্বাস্থ্যঝুকি, মোবাইল টাওয়ার বসানোর নিয়ম, cell phone radiation effects on the brain, harmful effects of mobile radiation, cell phone radiation effects on human body pdf, cell phone radiation effects on hands, mobile radiation effects in hindi, harmful effects of mobile radiation project, mobile radiation check, cell phone effects on health.
Informative
উত্তরমুছুনThanks
মুছুন